সংবাদদাতা, চাঁচল ও হরিশ্চন্দ্রপুর: ডাক্তার দেখিয়ে মেয়ের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুরুতেই সব শেষ। ট্রেনে উঠতে গিয়ে পাদানি থেকে পিছলে পড়ে রেললাইনে দু’খণ্ড হল মহিলার দেহ। সোমবার সকালে মালদহের চাঁচল থানার মালাহার স্টেশনে দুর্ঘটনাটি ঘটে। রেল পুলিস দেহ উদ্ধার করে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতার নাম মোমিনা বেওয়া (৬৩)। বাড়ি মালাহার রেলগেটের বাঁ দিকেই। কাটিহার-মালদহ কোর্ট আপ প্যাসেঞ্জার ট্রেনে উঠতে গিয়ে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনার পর দু’টি প্লাটফর্মের এই স্টেশনের পরিকাঠামো নিয়ে অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, সেখানে ২ নং প্লাটফর্মের কোথাও শেড নেই। ফলে দূরে গাছের তলায় ট্রেন ধরার জন্য অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। শৌচালয় ও পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই বলেও অভিযোগ। ফুটব্রিজ নেই বলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পারাপার করে থাকেন যাত্রীরা। সবথেকে বড়ো সমস্যা প্ল্যাটফর্ম অনেকটা নিচু। যার ফলে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে ওঠানামা করতে হয় যাত্রীদের। ট্রেনের দরজা থেকে প্ল্যাটফর্ম অনেকটা নিচু থাকার জন্যই উঠতে গিয়ে এদিন মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ। এদিন দেহের পাশে বসে মৃতার মেয়ে বলেন, সামসি স্টেশনে নেমে মা মালতীপুরে চিকিৎসা করাতেন।
সেখান থেকে আমার বাড়ি আসার কথা ছিল। এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে বুঝতে পারিনি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চাঁচল-২ ব্লকের ক্ষেমপুর, গৌরহন্ড ও ধানগাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ৩০ টি গ্রামের মানুষের রেলযাত্রার জন্য এই স্টেশনই ভরসা। প্রতিদিন শয়ে শয়ে যাত্রী এখান থেকে ওঠানামা করে থাকেন। ট্রেনের দরজা থেকে প্লাটফর্ম অনেকটা নিচু হওয়ায় চরম সমস্যা হয়। মালাহারের বাসিন্দা পরিমল সাহার অভিযোগ, প্ল্যাটফর্ম নিচু হওয়ায় উঠতে গিয়ে পড়ে মৃত্যু হয়েছে বৃদ্ধার।
এই স্টপেজে ট্রেন এক মিনিটের কম সময় দাঁড়ায়। প্লাটফর্মও অনেকটা নিচু। মহিলা ও বয়স্করা ট্রেনে উঠতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে ভাবা উচিত রেল কর্তৃপক্ষের। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মহেন্দ্রপুরের প্যারামেডিক্যাল ছাত্র মোহাম্মদ কাইফ এদিন হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে সামসি যাওয়ার জন্য এই ট্রেনে সফর করছিলেন। তিনি বলেন, স্টেশনে যথেষ্ট ভিড় হয়।
কোচ সংখ্যা কম থাকায় হুড়োহুড়িতে ট্রেনে উঠতে গিয়ে পা পিছলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে আমার সামনে। অবিলম্বে কোচ বাড়ানো হোক। এপ্রসঙ্গে কাটিহার ডিআরএম অফিসের এক আধিকারিক বলেন, কাটিহার- মালদহ কোর্ট প্যাসেঞ্জারের কোচ সংখ্যা বাড়ানোর জন্য রেলবোর্ডে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী মিটিংয়ে যাত্রী সুরক্ষার বিষয়টি আলোচনা করা হবে।