নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে ঘর তৈরির টাকা মিলেছে। অথচ বিএসএফের বাধায় দক্ষিণ বেরুবাড়ি সীমান্তের বাসিন্দারা সেই ঘর তৈরির কাজ শুরু করতে পারছেন না বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে সোমবার জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয় দক্ষিণ বেরুবাড়ি প্রতিরক্ষা কমিটি। নেতৃত্বে ছিলেন জলপাইগুড়ির প্রাক্তন বিধায়ক তথা ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা গোবিন্দ রায়। তাঁর অভিযোগ, দক্ষিণ বেরুবাড়ির নলজোয়াপাড়া, ছয়ঘরিয়াপাড়া, ছিটসাকাতি, নগর বেরুবাড়ির খুদিপাড়া, সিংপাড়া সহ বিভিন্ন গ্রামের ৬৪টি পরিবার বাংলার বাড়ি প্রকল্পে প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছে। কিন্তু তাঁরা ঘর তৈরি করতে গেলে বিএসএফ বাধা দিচ্ছে। আমাদের বক্তব্য, বাসিন্দাদের এখন যেখানে বাড়ি রয়েছে, সেখানেই তাঁরা সরকারি প্রকল্পে ঘর তৈরি করবেন। এতে বিএসএফ বাধা দেওয়ার কে?
বিষয়টি নিয়ে এদিন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) ধীমান বাড়ুইয়ের সঙ্গে দেখা করেন দক্ষিণ বেরুবাড়ি প্রতিরক্ষা কমিটির সদস্যরা। এ ব্যাপারে দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ দাবি করেন তাঁরা। এনিয়ে ২৫ জানুয়ারি দক্ষিণ বেরুবাড়িতে সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে ওই কমিটির তরফে। বিষয়টি নিয়ে বিএসএফের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) ধীমান বাড়ুই বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
গোবিন্দ রায় বলেন, দক্ষিণ বেরুবাড়ির বাসিন্দাদের জমির খতিয়ান নেই। এনিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমরা আন্দোলন করছি। শেষমেশ ঠিক হয়, জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক এবং স্থানীয় প্রশাসন খতিয়ে দেখে সেখানকার বাসিন্দাদের জমির খতিয়ান দেবে। সেই প্রক্রিয়া চলার মাঝেই বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি হয়। আর তারপর থেকেই দক্ষিণ বেরুবাড়ির বাসিন্দাদের উপর নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে। বাসিন্দারা আবাসের ঘরের টাকা পেলেও বিএসএফ তা তৈরি করতে দিচ্ছে না। বলছে, এখন ঘর তৈরি বন্ধ রাখতে হবে। কখনও বলা হচ্ছে, এলাকাটি সীমান্ত থেকে ১৫০-২০০ গজের মধ্যে পড়ছে, তাই সেখানে ঘর তৈরি করা যাবে না। কখনও আবার বিএসএফের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের হেড কোয়ার্টার থেকে সবুজ সঙ্কেত মিললে তারপরই সেখানে ঘর তৈরি করতে দেওয়া হবে। আমাদের বক্তব্য, স্থানীয় প্রশাসন ইতিমধ্যেই সরেজমিনে খতিয়ে দেখে সীমান্ত এলাকায় কোন বাড়িগুলি থাকবে, তা ঠিক করে দিয়েছে। তারপরও সেখানে বাড়ি তৈরিতে কেন বাধা দেবে বিএসএফ?
দক্ষিণ বেরুবাড়ির নলজোয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা সামসের আলি, ধনবিন্দু রায়, মণিবালা রায়ের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে আমরা যেখানে বাস করে আসছি, আবাসের টাকা পেয়ে সেখানেই আমরা ঘর তৈরি করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু বিএসএফ বলছে, এখন ঘর করা যাবে না। দক্ষিণ বেরুবাড়ি প্রতিরক্ষা কমিটির কার্যকরি সভাপতি হরিশ্চন্দ্র রায় ও সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক অন্নকান্ত দাস বলেন, বেশিরভাগই দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ। থাকার জায়গা বলতে একটাই ঘর। আবাসের টাকা পাওয়ার পরই অনেকে পুরনো ঘর ভেঙে ফেলেছেন। এখন বিএসএফ ঘর তৈরিতে বাধা দেওয়ায় বিপদে পড়েছেন সীমান্তের বাসিন্দারা।
(জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ দক্ষিণ বেরুবাড়ি প্রতিরক্ষা কমিটি। - নিজস্ব চিত্র।)