• ‘সিবিআই তদন্ত করল, নাকি ছেলেখেলা?’
    বর্তমান | ২১ জানুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বেলা ২টো বেজে ৪৯ মিনিট। শিয়ালদহ আদালতের ২১০ নম্বর ঘরে সঞ্জয় রায়কে যখন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনালেন বিচারক, ভিড়ে ঠাসা এজলাস থেকে তখন একটাই শব্দ ভেসে এল, ‘যাহ!’ দেশজুড়ে তোলপাড় ফেলে দেওয়া আর জি কর মামলায় দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়কে আদালত মৃত্যুদণ্ড দেবে বলে মনে করেছিলেন এজলাসে হাজির হওয়া সিংগভাগ আইনজীবী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রায় শুনে তাঁদের অজান্তেই যেন বেরিয়ে আসে হতাশাসূচক শব্দ। কয়েক মিনিটের মধ্যেই রায়দানের খবর পৌঁছে যায় আদালত চত্বরের বাইরে। ধর্ষক-খুনির ফাঁসির আদেশ না হওয়ায় অপেক্ষারত আম জনতার মধ্যেও হতাশা ছড়িয়ে পড়ে। এয়ারপোর্ট থেকে শিয়ালদহে আসা তরুণী মধুরিমা গুপ্ত যেমন বলেই ফেললেন, ‘সিবিআই এটা কী তদন্ত করল! এত বড় বড় অফিসার রয়েছেন। কিন্তু এরকম একটা কেসে ফাঁসির আদেশ আদায় করতে পারলেন না! সিবিআই এটা তদন্ত করল নাকি ছেলেখেলা?’


    গত শনিবার এই মামলার রায়দানের দিন শিয়ালদহ আদালতকে কঠোর নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল। সোমবার, সাজা ঘোষণার দিন সেই নিরাপত্তা কার্যত দ্বিগুণ করে দেয় লালবাজার। এদিন ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার তিনজন অফিসার আদালত চত্বরের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। সকাল ৯টা থেকে সাধারণ মানুষর ভিড় জমতে শুরু করে আদালতের সামনে। স্রেফ কৌতূহলের বশবর্তী হয়েও অনেকে দাঁড়িয়ে পড়েন। একই সঙ্গে অভয়া মঞ্চের ডাকে শিয়ালদহ মেট্রো স্টেশনের বাইরে জমায়েত শুরু হয়। সেই ভিড় ‘ম্যানেজ’ করার দায়িত্বে সকাল থেকেই প্রায় ৫০০ পুলিসকর্মী মোতায়েন ছিল। হাজির ছিল র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সও। আদালতের প্রতিটি গেটের দায়িত্বে ছিলেন একজন করে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার অফিসার। 


    তবে এজলাসের অভ্যন্তরে এদিন পুলিস ‘অতিসক্রিয়তা’ দেখিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। এই প্রথম শিয়ালদহ আদালতে এজলাসের ভিতরে বসানো হয় অ্যালুমিনিয়ামের গার্ডরেল। সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে সংবেদনশীল মামলার রায়দানে সার্বিক নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই এত কড়াকড়ি বলে জানিয়েছে লালবাজার। রায় নিজের কানে শুনতে এদিন আইনজীবী সহ বহু সাধারণ মানুষও ঢুকে পড়েন এজলাসে। চিঁড়েচ্যাপ্টা হওয়ার মতো পরিস্থিতি সত্ত্বেও অপেক্ষা করেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের আশাভঙ্গ হয় বিচারকের অনির্বাণ দাসের রায় শুনে। শিয়ালদহের বাসিন্দা অর্চনা সেন বলেন, ‘শাস্তির নামে প্রহসন হল। আর কিছুই না।’ দমদমের বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা ঘোষের বক্তব্য, ‘সঞ্জয় যে দোষ করেছে, তাতে যাবজ্জীবন কিছুই নয়। তবে ভালোই হয়েছে। আরও বড় আন্দোলনের সুযোগ তৈরি হল।’ 


    সাজা ঘোষণা হওয়ার পর শিয়ালদহে কালো মাথার ভিড় আরও বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি বুঝে আরও ফোর্স আসে লালবাজার থেকে। এরপরেই অভয়া মঞ্চের তরফে শিয়ালদহ থেকে মৌলালি পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মৌলালিতে অবস্থান বিক্ষোভ করেন তাঁরা। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ‘কলকাতা পুলিস ও সিবিআই, দু’পক্ষই সঠিকভাবে তদন্ত করতে ব্যর্থ।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)