দেবাশিস দাস
কলকাতা পুরসভার কোনও ওয়ার্ডে ল্যাম্প পোস্ট খারাপ থাকলে বা পরিত্যক্ত অবস্থায় দীর্ঘদিন পড়ে থাকলে কাউন্সিলারদের তা সরাসরি মেয়রকে জানাতে হবে। গত বছর গরমের আগে পরিশোধিত পানীয় জলের সমস্যা নিয়েও কাউন্সিলারদের একই নির্দেশে দিয়েছিলেন তিনি। এ বার বর্ষায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর মতো অবাঞ্ছিত ঘটনা এড়াতে কাউন্সিলারদের এই নির্দেশ দিলেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি কাউন্সিলারদের বলেছেন, ‘আপনাদের কারও ওয়ার্ডে ল্যাম্প পোস্ট খারাপ থাকলে সরাসরি আমাকে জানান। যা করার করব।’
২০২২–এর জুনে বেহালার হরিদেবপুরে জলমগ্ন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে ল্যাম্প পোস্টের খোলা তারে তড়িদাহত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল এক স্কুল–পড়ুয়ার। ল্যাম্প পোস্ট নিয়ে পুরসভার বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ উঠেছিল। বছর তিনেক আগের সেই ঘটনা এখনও পুরসভাকে অস্বস্তিতে রেখেছে। আর তাই পরিত্যক্ত এবং খারাপ ল্যাম্প পোস্ট নিয়ে সরাসরি তাঁকে জানানোর নির্দেশ দিলেন মেয়র। মেয়র চান, রাজ্যে বর্ষা আসার আগেই গরমের মরশুমের মধ্যেই যেন শহরের প্রতিটি ল্যাম্প পোস্ট ঠিকঠাক করে ফেলা যায়। তবে এই নির্দেশে পুরসভার অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে, মেয়র কি তাঁর পারিষদদের উপরে পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছেন না? তাই সরাসরি তাঁকে জানানোর নির্দেশ?
সম্প্রতি পুর–অধিবেশনে ১৩ নম্বর বরোর চেয়ারপার্সন তথা ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার রত্না শূর জানান, তাঁর বরোর বিভিন্ন ওয়ার্ড–সহ পুরসভার সংযোজিত এলাকার অনেক জায়াগতেই রাস্তার ল্যাম্প পোস্ট ঠিকঠাক রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে না। ফলে যে কোনও সময়ে বিপদের ঝুঁকি রয়েছে। বছর তিনেক আগে তাঁর ওয়ার্ডেই স্কুল–পড়ুয়ার মর্মন্তিক পরিণতির কথাও পুরকর্তাদের মনে করিয়ে দেন তিনি।
পুরসভার আলো বিভাগের মেয়র পারিষদ সন্দীপরঞ্জন বক্সী ক্ষুব্ধ কাউন্সিলারকে আশাস দিয়ে বলেছিলেন, ‘আপনার এলাকায় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে আমরা সদর্থক ভূমিকা নেব।’ এর পরেই মেয়র কাউন্সিলারদের উদ্দেশে বলেন, ‘ওয়ার্ডে লাইট রক্ষণাবেক্ষণ না হলে মেয়র পারিষদকে তালিকা জমা দিন।’ তার পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘ও সব করতে হবে না, কোনও ওয়ার্ডে ল্যাম্প পোস্ট নিয়ে কোনও সমস্যা থাকলে আপনারা সরাসরি আমাকে জানান, ব্যবস্থা নেব।’
এর পরেই অবশ্য পুর–কমিশনার ধবল জৈন একটি নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছেন, এ বার থেকে পুরসভার আলো বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং সাব–অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারদের ওয়ার্ডে–ওয়ার্ডে ঘুরে দেখতে হবে, ল্যাম্প পোস্ট ঠিকঠাক আছে কিনা, আলো জ্বলছে কিনা। প্রতি সপ্তাহে এ নিয়ে রিপোর্ট দিতে হবে। রিপোর্ট অনুযায়ী উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে পুরসভা। পুরসভা সূত্রে জানা যাচ্ছে, পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে পথবাতির হাল জানার চল পুরসভায় চালু ছিল ব্রিটিশ আমলেও। সে জন্যে নির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী ছিলেন। পুর–কমিশনারের সাম্প্রতিক নির্দেশিকায় সেই বাতিল রীতিই হয়তো ফেরত পেতে চলেছে কলকাতা।