কথাটা রবি ঠাকুর লিখেছিলেন ছোট গল্প প্রসঙ্গে। কিন্তু আরজি করে তরুণী চিকিৎসক–ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনে সিবিআইয়ের তদন্তেরও কি ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’ অবস্থা? অর্থাৎ, সোমবার, ঘটনার ১৬৪ দিন পর কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে শিয়ালদহ আদালত আমৃত্যু কারাবাস দেওয়ার পরেও কি তদন্ত শেষ হচ্ছে না? এই সাজার প্রেক্ষিতে সিবিআইয়ের পরবর্তী পদক্ষেপই বা কী হবে?
সিবিআই সূত্রের খবর, ‘এনহান্সমেন্ট অফ সেনটেন্স’ বা সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তবে দিল্লিতে ওই গোয়েন্দা সংস্থার সদর দপ্তর থেকে নির্দেশ আসার পরেই সবটা চূড়ান্ত হবে। সিবিআইয়ের তরফে সঞ্জয় রায়ের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করা করা হয়েছিল। কিন্তু শিয়ালদহ আদালত সোমবার সঞ্জয়কে আমৃত্যু কারাবাসের নির্দেশ দেয়।
আদালত জানায়, এই ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম নয়। সিবিআইয়ের দাবি ছিল, এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা, সে জন্যই দোষীর ফাঁসি চেয়ে আবেদন করা হয়। এ দিন আদালত সাজা ঘোষণা করার পর দিল্লির সদর দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে কলকাতায় সিবিআইয়ের স্পেশাল ক্রাইম ব্রাঞ্চের তরফে। সিবিআই সূত্রের খবর, সাজার অর্ডারের কপি খুঁটিয়ে পড়ে, বিচার–বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে সিবিআইয়ের তরফে সম্ভাব্য অন্য একটি পদক্ষেপের বিষয়ও রয়েছে। আরজি করে ষড়যন্ত্র ও তথ্যপ্রমাণ লোপাটের ঘটনায় অভিযুক্ত আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের বিরুদ্ধে সিবিআই কি সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করতে পারবে? সিবিআই সূত্রের খবর, মূল মামলায় সঞ্জয় যাতে সাজা পায়, সেটাই মূল লক্ষ্য ছিল। তদন্ত এখনও চলছে। পরে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়া হতেই পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা হতে পারে, তার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিশিষ্ট আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতার বক্তব্য, ‘সিবিআই সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে হাইকোর্টে যেতেই পারে। তবে সন্দীপ ও অভিজিতের ক্ষেত্রে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়া হলে আইনি জটিলতা হতে পারে। কারণ, মূল ধর্ষণ–খুনের মামলায় এফআইআর একটি। ফলে, একই মামলায় ষড়যন্ত্র ও তথ্যপ্রমাণ প্রমাণ লোপাটের ঘটনায় ফের কী ভাবে ট্রায়াল হবে?’
তাঁর সংযোজন, ‘সন্দীপ ও অভিজিতের বিরুদ্ধে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিলে সঞ্জয়কেও ফের ট্রায়ালে কী ভাবে আনা হবে? একই মামলায় দু’–দু’বার তো ট্রায়াল হয় না। ফলে আইনি জটিলতা হতে পারে।’