এই সময়, সোদপুর: পাড়ার মেয়ের নৃশংস মৃত্যুর বিচার চেয়ে ক্ষোভ আছড়ে পড়েছিল রাস্তায়। আট থেকে আশি, সকলেই সরব হয়েছিলেন বিচার চেয়ে৷ অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে কলকাতার রাজপথ যেমন মুখরিত হয়েছিল, তেমনই নিহত চিকিৎসক তরুণীর শহর সোদপুরের মানুষও পথে নেমেছিলেন একই দাবিতে৷ আরজি করের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ–খুনের দায়ে ধৃত সঞ্জয় রায়কে সোমবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে শিয়ালদহ আদালত। সেই রায়ে তাঁরা যে মোটেও খুশি নন, তা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন সোদপুরের বাসিন্দারা। একই সঙ্গে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন তাঁরা।
ঘরের মেয়েকে হারানোর যন্ত্রণা তো ছিলই। কিন্তু অভিযুক্ত সঞ্জয়ের সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় সোদপুরের বাসিন্দাদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভের আগুন। সকলের একটাই প্রশ্ন, একা সঞ্জয়ের পক্ষে তো এই কাজ সম্ভব ছিল না। তা হলে বাকিরা কোথায় গেল? তবে কি কোনও কিছু অথবা কাউকে আড়াল করা হচ্ছে? বাসিন্দারা একদিকে যেমন বিচারের দাবিতে নতুন করে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা নিচ্ছেন, তারই সঙ্গে আইনি পথে বিচার ছিনিয়ে আনবেন বলে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এলাকার মানুষ।
একই দাবি নির্যাতিতার বাবা–মায়ের। তাঁদের বক্তব্য, বিচারে একটি ধাপ তাঁরা এগিয়েছেন ঠিকই, তবে তাতে সন্তুষ্ট নন। আর্থিক ক্ষতিপূরণ নয়, আইনি পথেই তাঁরা মেয়ের মৃত্যুর ন্যায্য বিচার ছিনিয়ে আনবেন।
গত বছরের ৯ অগস্ট রাতে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়া চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের নৃশংস ঘটনায় চমকে উঠেছিল রাজ্যবাসী। অভিযুক্তদের কঠোরতম শাস্তির দাবিতে প্রতিদিন সন্ধ্যায় সোদপুর ট্র্যাফিক মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন শহরবাসী। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবরোধে আটকে থেকেও বিক্ষোভকারীদের সমর্থন জানিয়েছিলেন নিত্যাযাত্রীরাও। সোমবার সঞ্জয় রায়ের সাজা ঘোষণা দেখতে সকাল থেকে টিভিতে চোখ রেখেছিলেন সোদপুরের মানুষ। তাঁরা ভেবেছিলেন, এমন নৃশংস হত্যায় আদালতে অভিযুক্তের সর্বোচ্চ ফাঁসির সাজা হবে৷ কিন্তু সাজা ঘোষণার পর হতাশা গ্রাস করে শহরবাসীকে।
এ দিন মৃত চিকিৎসকের প্রতিবেশী এক মহিলা বলেন, ‘আমরা এই রায়ে খুশি নই। তদন্তের দায়িত্ব কলকাতা পুলিশের হাত থেকে সিবিআইয়ের হাতে যাওয়ায় আমরা কিছুটা সন্তুষ্ট হয়েছিলাম। কিন্তু সিবিআইয়ের তদন্তে কোনও অগ্রগতি সে ভাবে কিছু দেখলাম না।’ ওই মহিলার প্রশ্ন, ‘সিবিআই তা হলে কী করলো এত দিন ধরে? বাকি অপরাধীরা কোথায়?’ আর এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা সঞ্জয়ের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চেয়েছিলাম। এ দিনের রায়ে একদমই খুশি হতে পারছি না। সিবিআই কী করল, বুঝলাম না। সঞ্জয়ের সঙ্গে অনেকে রয়েছে। তারা কবে শাস্তি পাবে?’
নির্যাতিতার প্রতিবেশী এক কাকু বলেন, ‘সাজা শুনতে দুপুর থেকে টিভির সামনে বসেছিলাম। আদালতের রায়ে হতাশ হয়েছি। যে দিন ন্যায্য বিচার পাব, সে দিন আনন্দ, উল্লাস হবে। তার আগে এলাকায় কোনও উৎসব অনুষ্ঠান হবে না৷’