• আরজি কর কাণ্ড: সন্দীপ-অভিজিত্‍‍দের কী হবে? তদন্ত নিয়ে যে প্রশ্নগুলি উঠছেই
    আজ তক | ২১ জানুয়ারি ২০২৫
  • আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসকের  ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা গোটা দেশকে হতবাক করেছিল। এখন এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করে আজীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। কিন্তু এই জঘন্য অপরাধে অভিযুক্ত হিসেবে অনেকের নাম জড়িত ছিল, যাদের ওপর সন্দেহের তীর ছিল। এরমধ্যে অন্যতম আরকি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার SHO অভিজিৎ মণ্ডল। এদের কী হবে? দোষী প্রমাণিত হবে? চলুন জেনে নেওয়া যাক মামলার অবস্থা।

    টালা থানার SHO অভিজিৎ মণ্ডল
    আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল যে এলাকায় অবস্থিত তা টালা থানার অন্তর্গত। ঘটনার সময় স্টেশন ইনচার্জ অভিজিৎ মণ্ডল সেখানে ছিলেন। যার বিরুদ্ধে অপরাধের দৃশ্য নষ্ট করা এবং প্রমাণ কারচুপির অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার তদন্তকালে দেখা গেছে যে অপরাধের পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলটি পরিষ্কার করে। পুলিশের এই পদক্ষেপের কারণে গুরুত্বপূর্ণ ফরেনসিক তথ্য নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও অভিজিৎ মন্ডলের বিরুদ্ধে অপরাধীদের রক্ষা এবং বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ ছিল। এই কারণে, অভিজিৎ মণ্ডলকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিষেবা বিধি অনুযায়ী সাসপেন্ড করা হয়। এরপর ১৪ সেপ্টেম্বর অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করে সিবিআই। পরে সিবিআই আদালতকে বলেছিল যে অভিজিৎ  তদন্তে সহযোগিতা করছেন না। কিন্তু পরে অভিজিৎ মণ্ডলের জামিনও মঞ্জুর করে আদালত।

    পুলিশের গাফিলতি
    এর আগেও কলকাতা পুলিশের গাফিলতি নিয়ে বড়সড় তথ্য প্রকাশ করেছিল সিবিআই। তদন্তকারী সংস্থা বলেছিল যে প্রধান অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের জামাকাপড় এবং জিনিসপত্র  গ্রেফতারের দুদিন পর উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জেনেও এই বিলম্ব করেছিল। অভিযুক্তের জিনিসগুলি অপরাধে তার ভূমিকা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হতে পারে। এ ছাড়া স্থানীয় পুলিশের বিরুদ্ধে প্রমাণ কারচুপি ও অভিযুক্তকে বাঁচানোর চেষ্টার অভিযোগও ওঠে।

    প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ
    এই মামলা সিবিআইয়ের জন্যও চ্যালেঞ্জের চেয়ে কম ছিল না। এর আগে কলকাতা পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করেছিল। সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতারের  পর মামলার সুরাহা হয়েছে দাবি করে মামলাটি প্রায় বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুলিশ। যেখানে লোকেরা মনে করেছিল যে এটি করে পুলিশ আরজি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ সহ কয়েকজনকে ড়াল করার চেষ্টা করছে। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে নিরাপত্তায় গাফিলতি এবং প্রমাণ নষ্ট করার অভিযোগ ওঠে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি এবং প্রমাণ সংরক্ষণে ব্যর্থতার জন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে ঘটনার পর দ্রুত সেমিনার হল পরিষ্কার করার অভিযোগ রয়েছে, যা অপরাধের প্রমাণকে  ধ্বংসস্তূপে ফেলে দিয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে যখন সিবিআই তদন্ত শুরু হয়েছিল, তখন তদন্তে অনেক চমকপ্রদ তথ্য উঠে আসে, যেমন নিরাপত্তা ক্যামেরার কাজ না করা এবং অপরাধের দৃশ্যের বিকৃতি। এই অবহেলা অপরাধীদের প্রমাণ নষ্ট করার সুযোগ করে দিয়েছে।

    সন্দীপ ঘোষ প্রথম থেকেই সন্দেহজনক ছিলেন
    এই পুরো ঘটনায় ডক্টর সন্দীপ ঘোষ নিজেই সন্দেহজনক চরিত্র ছিলেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রকে তার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। তাঁর ক্ষমতা এতটাই  ছিল যে যখন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ নির্বাচনের জন্য ইন্টারভিউ অনুষ্ঠিত হচ্ছিল, তখন তিনি সেখানে ১৬তম স্থান পেয়েছিলেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁকে অধ্যক্ষ করা হয়েছিল। এরপর দুবার তাকে আরজি করে হাসপাতাল থেকে বদলি করা হয়। কিন্তু বদলির আদেশ জারি হওয়া সত্ত্বেও দুবারই তিনি হাসপাতালেই স্বমহিমায় ছিলেন। তার বিরুদ্ধে হাসপাতালের বর্জ্য সামগ্রীর টেন্ডার থেকে শুরু করে পার্কিং টেন্ডার পর্যন্ত ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জুনিয়র চিকিৎসকের মৃত্যুর পর তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ ওঠে। তার গ্রেফতারির পরে, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪-এ, শিয়ালদা আদালত প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে জামিন দেয়। যদিও আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছিল।

    ৫৩ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ চলে
    তথ্য অনুযায়ী, প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অনিয়ম, অবৈধ কমিশন গঠন এবং নিয়োগে কারচুপির অভিযোগ ছিল। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে জেরা করে চলেছে তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। সঞ্জয় রায় ছাড়াও, তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যাকে সিবিআই ৪ দিনে ৫৩ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরে একাধিক অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। তদন্তও করা হয়। ফলে ঘোষকে দুইবার বদলি করা হয় এবং দুইবারই তিনি বদলির আদেশ বাতিল করতে সফল হন। সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ময়নাতদন্তের জন্য রাখা মৃতদেহ বেআইনি ব্যবহারের মতো গুরুতর মামলার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে কলেজের কর্মীরা একাধিকবার স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি দিলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

    এভাবেই জামিন পেলেন সন্দীপ ও অভিজিৎ
     অভিযুক্তের আবেদনের শুনানি করার সময়, আদালত সন্দীপ ঘোষ এবং টালা  থানার তৎকালীন ইনচার্জ অভিজিৎ মণ্ডলকে জামিন দিয়েছিল। প্রমাণ নষ্ট করার অভিযোগে অভিজিৎ মন্ডলকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। কিন্তু সিবিআই গ্রেফতারের ৯০ দিন পরেও তাদের বিরুদ্ধে ৃ চার্জশিট দাখিল না করায় আদালত তাদের উভয়কে জামিন দেয়।

    প্রসঙ্গত, তথ্য-প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন সন্দীপ-অভিজিৎ।  তথ্য লোপাটের মামলায় জামিন পেলেও, এখনও চলছে আর্থিক দুর্নীতির মামলা। আর্থিক দুর্নীতি মামলায় জেলেই থাকতে হবে সন্দীপ ঘোষকে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, কেন ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দিতে পারল না CBI ? আর জি কর মামলায় CBI-র ভূমিকা নিয়েও রয়েছে  পরতে পরতে প্রশ্ন। 
  • Link to this news (আজ তক)