• প্রশিক্ষণ ছাড়াই কটেজ কর্মীকেই হাতি দেখার দায়িত্ব? বিতর্ক
    এই সময় | ২১ জানুয়ারি ২০২৫
  • অর্ঘ্য বিশ্বাস, গোরুমারা

    বন দপ্তরের কটেজ কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। ছিল না হাতির মেজাজ–মর্জি বুঝে তাকে সামলানোর কোনও প্রশিক্ষণ। সেই কাজে নিযুক্ত হওয়ায় বেঘোরে প্রাণ গেল পাতাওয়ালা মাধব খেরিয়ার। কেন এক কটেজ কর্মীকে কুনকি হাতির পাতাওয়ালার কাজ দেওয়া হল? বন দপ্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

    মাসখানেক আগে গোরুমারায় পাতাওয়ালা হিসেবে কাজে যোগ দেন বছর পঁয়ত্রিশের মাধব। তেমন ভাবে কাজ শিখে ওঠার সময়ও পাননি। এই পদের কর্মীরা হাতির কাছাকাছি থেকে তাদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেন। রবিবার কুনকি হাতি মানিককে দেখভালের সময়ে তারই হাতে মারা পড়েন মাধব।

    মানিককে কিছু দিন আগে গোরুমারার পিলখানা থেকে গরাতি ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। অভিজ্ঞ মাহুতের তত্ত্বাবধানে রেখে বশে আনা হয়েছিল নতুন অতিথিকে। মানিকের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন মাহুত সুরজ ওঁরাও। এর সহকারী হিসেবে পাতাওয়ালা মাধবকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

    সূত্রের খবর, রবিবার ঘটনার সময় মাহুত সুরজ ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তার অনুপস্থিতিতে মাধব মূর্তি নদী লাগোয়া ঘাসবন থেকে মানিককে পিলখানায় আনতে যান। এই সময়ে হাতির পিঠে বসতে গিয়েই ঘটে বিপত্তি। কান ধরে উপরে ওঠার চেষ্টা করেন পাতাওয়ালা। সেই সময় হাত ফস্কে নীচে পডে় যান তিনি। এর পরই হাতি আক্রমণ করে বসে তাঁকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মাধবের।

    ১০ বছরের বেশি সময় ধরে মাধব গোরুমারার নর্থ রেঞ্জের আওতাধীন কটেজগুলির দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন। হঠাৎ করেই বন দপ্তর তাঁকে পাঠায় সাউথ রেঞ্জের পাতাওয়ালার কাজে। সূত্রের খবর, এই পদ খালি ছিল। তখনই কটেজের কর্মীদের পাতাওয়ালার কাজের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কটেজ কর্মীরা হাজার পাঁচেক টাকা বেতন পান, পাতাওয়ালাদের বেতন ১০ হাজারের মতো। এই প্রস্তাব পেয়ে নতুন কাজে যুক্ত হন মাধব।

    বন দপ্তরের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ডুয়ার্সের পরিবেশপ্রেমী অনির্বাণ মজুমদারের কথায়, ‘প্রশিক্ষণ ছাড়া কী ভাবে একজন বনকর্মীর কাজের প্রকৃতি বদলে দেওয়া হলো, কুনকি হাতির পাতাওয়ালার কাজ করানো হলো, এটা বোঝা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার।’

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কটেজ কর্মী জানান, বেশ কয়েক মাস আগে বন দপ্তর তাঁদের পাতাওয়ালার কাজের প্রস্তাব দিয়েছিল। যদিও ঝুঁকির কথা ভেবে অনেকেই অনীহা প্রকাশ করেন। এ ধরনের প্রস্তাব কর্মীদের দিয়ে তাঁদের কি মৃত্যুমুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে না? ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, ‘যিনি কটেজ দেখতেন, তাঁকে কেন এত বড় হাতির দেখভালের কাজে নিয়োগ করা হলো, এটা সত্যি বিস্ময়ের। এই ঘটনা গোরুমারায় প্রথমবার ঘটল। জলদাপাড়ায় এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এলেও গোরুমারার ইতিহাসে এটা ঘটেনি।’

    এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার বনাধিকারিকেরা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। গোরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের ডিএফও দ্বিজপ্রতিম সেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

    মাধবের মৃত্যুতে অথৈ জলে পড়েছেন তাঁর স্ত্রী ও তিন কন্যা। মৃতের শ্বশুর অসীম রায় বলেন, ‘কর্তব্যরত অবস্থায় মাধবের মৃত্যু হয়েছে। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি পরিবারের একজন সদস্যকে স্থায়ী চাকরি দেওয়া উচিত বন দপ্তরের।’ উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণী বিভাগের মুখ্য বনপাল ভাস্কর জেভি বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি যাতে চাকরির ব্যবস্থাও করা যায়, তার চেষ্টা করা হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)