বিশ্বরূপ বিশ্বাস, রায়গঞ্জ
তালাকের কথা শুনেই তেলে–বেগুনে জ্বলে উঠেছিল সাজ্জাক। জেলে বসেই দ্বিতীয় স্ত্রী মুসকান বেগম এবং তাঁর পুরো পরিবারকে খতম করার হুমকি দিয়েছিল সে। সেই সাজ্জাক পালিয়ে গিয়েছে খবর পেয়েই মুসকান তাই পুলিশের সাহায্য চান। গোয়ালপোখর থানার পুলিশের ঘেরাটোপে রাখা হয়েছিল তাঁকে।
পুলিশের এনকাউন্টারে সাজ্জাক মারা যাওয়ার পরে রবিবার নিজের ঘরে ফিরেছেন মুসকান। আর তার পরেই বিস্ফোরক মন্তব্য, ‘পুলিশ সাজ্জাককে গুলি করে মারায় আমি খুশি। পুলিশ ওকে না–মারলে, ও আমাকে এবং আমার পরিবারের লোকেদের খুন করে ফেলত।’
গ্রামের নাম ছোট শহর। উত্তর দিনাজপুর জেলার করণদিঘি থানার এই গ্রামেই বাড়ি সাজ্জাকের। সেখানে থাকেন তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও এক ছেলে। ছেলে মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। প্রথম স্ত্রী থাকলেও সাজ্জাক পরে মুসকানকে বিয়ে করে। একটি মেয়েও হয় তাদের। ২০১৯ সালে করণদিঘি থানার খিরকিটোলার বাসিন্দা মুরগি ব্যবসায়ী সুবেশ দাসকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় পুলিশ সাজ্জাক–সহ বেশ কয়েক জনকে গ্রেপ্তার করে।
সাজ্জাকের কাস্টডি ট্রায়াল শুরু হয়েছিল। মুসকান রায়গঞ্জ জেলা সংশোধনাগারে গিয়ে বেশ কয়েক বার স্বামীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কথায় কথায় তিনি বুঝতে পারেন, সাজ্জাকের জেল থেকে থেকে ছাড়া পাওয়া প্রায় অসম্ভব। সাজ্জাক নিজেও সেটা বুঝেছিল। তত দিনে মোহভঙ্গ হয়েছে মুসকানের। তালাকের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু রায়গঞ্জ সংশোধনাগারে বন্দি সাজ্জাক সে সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি।
তালাক দিলে মুসকান এবং তাঁর পরিবারের লোকেদের খুন করবে বলে হুমকি দেয় সে। তবে মুসকান তাতে দমে যাননি। স্থানীয় মাদ্রাসায় গিয়ে ‘খোলা তালাক’ সারেন। এর পরে একটি নার্সিংহোমে কাজ নেন তিনি। সেখানেই এক জনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হওয়ায় বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন মুসকান। ইতিমধ্যে গত ১৫ জানুয়ারি পাঞ্জিপাড়ায় পুলিশকে গুলি করে পালায় সাজ্জাক। সে খবর পেয়ে হুমকির কথা মনে করে ভয়ে কেঁপে উঠেছিলেন মুসকান। সরকারি আইনজীবী মুক্তার আহমেদের পরামর্শে গোয়ালপোখর থানার পুলিশের শরণাপন্ন হন তিনি।
ইসলামপুর পুলিশের নির্দেশে গোয়ালপোখর থানা নিরাপত্তা দিতে মুসকানকে বাড়ি থেকে তুলে থানায় নিয়ে আসে। চার দিন চরম আতঙ্কে কাটে তাঁর। অবশেষে পুলিশের এনকাউন্টারে সাজ্জাকের মৃত্যুর খবর পেতে হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন তিনি। রবিবার সাজ্জাকের মৃতদেহের ময়নাতদন্তের পর তাঁকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বাড়ি ফিরে সন্তানকে কোলে নিয়ে এখন নিশ্চিন্ত মুসকান। বললেন, ‘পুলিশ একজন ‘কুখ্যাত দুষ্কৃতী’কে গুলি করে হত্যা করে একদম ঠিক কাজ করেছে। আমি এখন আমার মেয়েকে নিয়ে শান্তিতে থাকতে চাই।’