চাঁদকুমার বড়াল ■ কোচবিহার
লক্ষ্য আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচন। নিজেদের এবং অনুগামীদের টিকিট নিশ্চিত করতে এখন থেকেই ঘুঁটি সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। তার ফলেই কোচবিহারে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব একেবারে প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে। এই লড়াইয়ের একদিকের কুশীলব ‘কাকা–ভাইপো’। অর্থাৎ প্রাক্তন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়। অন্যদিকে রয়েছেন উদয়ন গুহ, অভিজিৎ দে ভৌমিক (হিপ্পি) এবং জগদীশ বর্মা বসুনিয়া। রাজ্য সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি, বিজেপিকে আক্রমণ সব কিছুকে শিকেয় তুলে যুযুধান দু’পক্ষ এখন নিজেদের মধ্যে কাজিয়ায় ব্যস্ত।
অথচ, এক সময়ের নিজেদের শক্তঘাঁটি কোচবিহারে এই মুহূর্তে অনেকটাই ব্যাকফুটে বিজেপি। লোকসভার আসন হাতছাড়া হয়েছে। তারপরই বিজেপির হাতে থাকা একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতের দখল নিয়েছে তৃণমূল। রাজনৈতিকভাবে অনেকটাই শক্ত জমিতে শাসক দল। কিন্তু পায়ের তলার জমি যত শক্ত হয়েছে, ততই বেড়েছে কোন্দল।
অবস্থা এমন যে, রবি–পার্থর সভায় ভুলেও যান না হিপ্পি– উদয়ন–জগদীশরা। আবার এঁদের সভার ছায়াও মারান না কাকা–ভাইপো। শুধু নেতারা নন, তাঁদের অনুগামীরাও এই দূরত্ব বজার রেখে চলেন। এর পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও নাম না করে একে অপরের বিরুদ্ধে কটাক্ষ, টিপ্পনি করে চলেছে। দিনহাটার পুরসভা দুর্নীতি নিয়ে রবি যেমন উদয়নের নাম না করে লিখেছেন, ‘চোরের মায়ের বড় গলা।’
দু’বছর আগে শিলিগুড়িতে এক অনুষ্ঠানে রবি, পার্থ, উদয়ন, জগদীশ, জলিলরা একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে ছবি তুলেছিলেন। তাঁদের মধ্যে যে কোনও গোষ্ঠীকোন্দল নেই, সেটা বোঝাতেই ওই ফটোশুট করা হয়েছিল। এরপর তোর্সা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। সেই ‘ফিল গুড’ আবহাওয়া বিলকুল উড়ে গিয়েছে। এখন বিধানসভায় কে কোন কেন্দ্রে দাঁড়াবেন, তার অঙ্ক কষা চলছে। শাসক দল সূত্রের খবর, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ তাঁর পুরনো নাটাবাড়ি বিধানসভায় এলাকায় ফের দাঁড়াতে চাইছেন।
পার্থপ্রতিম রায় গত নির্বাচনে শীতলখুচি আসনে পরাজিত হওয়ায় এবার নিরাপদ আসন খুঁজছেন। জেলা রাজনীতির রাশ এখন উদয়ন–হিপ্পিদের হাতে। আগামী বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত যদি তাঁদের হাতে ক্ষমতার ব্যাটন থাকে তাহলে টিকিট মেলা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে মনে করছে রবি গোষ্ঠী। উল্টো দিকে ক্ষমতার রাশ যদি চলে যায় সে ক্ষেত্রে কী হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে উদয়ন গোষ্ঠীও। ফের দিনহাটাতেই উদয়ন যে দাঁড়াতে চাইবেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই। হিপ্পি গত নির্বাচনে কোচবিহার দক্ষিণ আসনে পরাজিত হলেও এবারও ওই আসনেই দাঁড়াতে চান। দক্ষিণে তাঁর একাধিক কর্মসূচি থেকেই তা পরিষ্কার।
তবে এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন কোচবিহারে তৃণমূলের চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মন। তিনি বলেন, ‘বিধানসভা নির্বাচনে কে কোথায় দাঁড়াবেন সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক করবেন। যে যাই কথাই বলুন, সকলেই দায়িত্ববান এবং দলের একনিষ্ঠ কর্মী। দলের ক্ষতি হয় এমন কাজ কেউ করছেন না বা করবেন না।’