• সাপে না কামড়ালেও এভিএস কেন? প্রশ্ন মৃত ছাত্রীর পরিবারের
    এই সময় | ২১ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, কালনা: ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সাধনা বসাকের (১১) মৃত্যুতে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠল পরিবারের তরফে। সাপে না কামড়ালেও কেন তাকে সাপে কামড়ানোর প্রতিষেধক (এভিএস) দেওয়া হলো, সেই প্রশ্ন তুললেন কালনার গ্রাম কালনার বাসিন্দা ওই পরিবারের লোকজন।

    কালনা মহকুমা হাসপাতালের সুপার চন্দ্রশেখর মাইতির কাছে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন তাঁরা। রবিবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না–তদন্ত হয় দেহের। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়রাম হেমব্রম বলেন, ‘ময়না–তদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর তদন্ত করে দেখা হবে। ওই ছাত্রীকে যখন হাসপাতালে আনা হয়েছিল তখন তার কোনও জ্ঞান ছিল না। তার কিছু লক্ষণ দেখে চিকিৎসকদের সাপে কামড়েছে বলে সন্দেহ হওয়ায় এভিএস দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন।

    শনিবার স্কুলে অসুস্থ হয়ে পড়ে ধাত্রীগ্রাম বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী সাধনা। খবর পেয়ে তার বাবা বিষ্ণু বসাক তাকে স্কুল থেকে বাড়ি নিয়ে আসার পর কালনা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে তার চিকিৎসা শুরুর পর অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। দেহ সেখান থেকে বাড়ি নিয়ে আসার পর ছাত্রীর চোখের পাতা নড়ে ওঠে বলে দাবি পরিবারের। তার সেই সময়ে প্রস্রাবও হয় বলে দাবি। তাকে ফের কালনা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে ওই ছাত্রী মৃত বলেই জানান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেহ ময়না–তদন্তে পাঠায়।

    হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি সাপে (কালাচ বা কমন ক্রেট) কামড়ালে যে লক্ষণ দেখা যায় তা ওই ছাত্রীর থাকায় তাকে এভিএস দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হয়। ওই সাপ কাউকে কামড়ালে অনেক সময়ে সেটা বোঝা যায় না। যে স্থানে কামড়ায় সেখানে কোনও চিহ্নও থাকে না। ওই ছাত্রীকে ১০ ভায়াল এভিএস দেওয়া হয় বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।

    ছাত্রীর শোকার্ত মা শম্পা বসাক সোমবার বলেন, ‘ভাত খেয়ে ভালো মেয়ে স্কুলে গেল। স্কুলে খেলাধুলোও করেছে। সেখানে টিফিন খাওয়ার পর বমি করে। স্কুল থেকে ফোনে জানানোর পর ওর বাবা গিয়ে নিয়ে এল বাড়িতে। মেয়ের অবস্থা ভালো নয় বুঝে কালনা হাসপাতালে নিয়ে যাই। নার্সরা জানতে চাইলেন ওকে কিছুতে কামড়েছে কি না। মেয়েকে জিজ্ঞাসা করাতে হাত নেড়ে বলল কিছু কামড়ায়নি। আমিও দেখলাম যে কামড়ের চিহ্ন নেই। বর্ধমান মেডিক্যালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মেয়েকে মৃত ঘোষণা করে। ওখানেই জানতে পারলাম কালনা হাসপাতালে মেয়েকে সাপে কামড়ানোর প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। সাপে না কামড়ালেও কেন তাকে সাপে কামড়ানোর প্রতিষেধক দেওয়া হলো? ভুল চিকিৎসায় মেয়েটা চলে গেল।’

    ধাত্রীগ্রাম বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা চিত্রা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘শনিবার বেলা ২টো নাগাদ স্কুল ছুটির পর বের হওয়ার সময়ে মাথার পিছন দিকে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করে ও। দিদিমনিরা ধরে নিয়ে গিয়ে এক জায়গায় বসায়। তার মিনিট পাঁচেকের মধ্যে বমি করে। বাড়িতে জানানোর পর ওর বাবা এসে টোটোতে ওকে বাড়ি নিয়ে যায়। আগে কখনও ও স্কুলে অসুস্থ হয়নি। স্কুল ক্যাম্পাস খুব পরিষ্কার। এখানে সাপে কামড়াতে পারে না।’

  • Link to this news (এই সময়)