• আরজি করের নির্যাতিতার দেহে কী ভাবে অন্য এক মহিলার ডিএনএ? সন্দেহ, রহস্য এবং একটি ভিডিয়ো
    আনন্দবাজার | ২১ জানুয়ারি ২০২৫
  • আরজি করের মহিলা চিকিৎসক-পড়ুয়াকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য। নিহত পড়ুয়ার শরীরে পাওয়া গিয়েছে আরও এক মহিলার ডিএনএ-র নমুনা। ময়নাতদন্তের পর ওই চিকিৎসকের দেহে ধর্ষক সঞ্জয় রায় ছাড়াও সামান্য মাত্রায় মিলেছে অজ্ঞাতপরিচয় এক মহিলার ডিএনএ। এর পরেই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি সঞ্জয় ছাড়াও ওই দিন ঘটনাস্থলে কোনও মহিলা উপস্থিত ছিলেন? সেই প্রশ্নেরই উত্তর মিলল বিচারক অনির্বাণ দাসের নির্দেশনামায়।

    সোমবার দোষী সঞ্জয় রায়কে যাবজ্জীবন শাস্তি দিয়েছেন বিচারক। প্রকাশ্যে এসেছে বিচারক দাসের নির্দেশনামা। কেন সঞ্জয়কে ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবনের সাজা শোনানো হল, কেন অপরাধ ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ নয়, ঘটনাস্থলে আরও কেউ উপস্থিত ছিলেন কি না, ১৭২ পাতার সেই নির্দেশনামায় এমনই নানা প্রশ্ন রয়েছে। রয়েছে উত্তরও। যেমন, নির্দেশনামার এক জায়গায় বলা হয়েছে, নির্যাতিতার শরীরে ১০০ শতাংশ মাত্রায় সঞ্জয়ের ডিএনএ মিলেছে। সঙ্গে সামান্য মাত্রায় পাওয়া গিয়েছে আর এক মহিলার ক্রোমোজ়োম। ময়নাতদন্তে যৌনাঙ্গ এবং স্তনবৃন্ত থেকে নমুনা সংগ্রহের সময়েই ওই ডিএনএ-র হদিস মিলেছে। এ কথা প্রকাশ্যে আসার পরেই শুরু হয় জল্পনা, তা হলে কি ঘটনাস্থলে সঞ্জয় ছাড়াও আরও কেউ উপস্থিত ছিলেন? যদিও সেই দাবি খারিজ করে দিয়েছে বিচারক দাসের নির্দেশনামা। সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ‘‘ময়নাতদন্তের ভিডিয়ো ফুটেজ খতিয়ে দেখে জানা গিয়েছে, ময়নাতদন্ত চলাকালীন গাফিলতির কারণেই এই বিপত্তি।’’

    অপরাধে আরও কারও জড়িত থাকার জল্পনার বিপক্ষে শুরু থেকেই সিবিআইয়ের যুক্তি ছিল, ময়নাতদন্তের সময় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের গাফিলতিতে কোনও ভাবে ওই ডিএনএ সংক্রামিত হয়ে থাকতে পারে। সেই দাবিকেই মান্যতা দিয়েছেন বিচারপতি। নির্দেশনামায় বলা হয়েছে, ময়নাতদন্তের ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ময়নাতদন্ত কক্ষের মেঝেতে পড়ে রয়েছে আরও একাধিক দেহ। অভিযোগ, যে ট্রে-তে নির্যাতিতার দেহ রাখা হয়েছিল, সেটিও ভাল ভাবে জীবাণুমুক্ত করা হয়নি। তা ছাড়া, ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, ময়নাতদন্তের আলাদা আলাদা প্রক্রিয়ার আগে গ্লাভ্‌স কিংবা অ্যাপ্রন বদলাচ্ছেন না মর্গের ডোম। জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে না ছুরি, কাঁচিও। এর পরেই বিচারকের তোপ, ময়নাতদন্তের সময় নির্ধারিত প্রোটোকলগুলি আদৌ মেনে চলা হয়নি। তাঁর মতে, চিকিৎসকদের দোষে নয়, বরং পরিকাঠামোর অভাবেই এই বিপত্তি।

    সোমবার দুপুরে সাজা ঘোষণা হয় সঞ্জয়ের। সন্ধ্যার পর বিচারক দাসের নির্দেশনামার প্রতিলিপি আদালতের ওয়েবসাইটে ‘আপলোড’ হয়। এর পরেই শিয়ালদহ আদালত থেকে বার করে নিয়ে যাওয়া হয় সঞ্জয়কে। নিয়ে যাওয়া হয় প্রেসিডেন্সি জেলে। ৫৯ দিনের বিচারপ্রক্রিয়া শেষে গত শনিবারই সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪, ৬৬ এবং ১০৩(১) ধারায় তাঁর অপরাধ প্রমাণিত হয়েছিল। সোমবার সিবিআই আরজি কর-কাণ্ডকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ ঘটনা বলে আদালতে উল্লেখ করে সঞ্জয়ের ‘সর্বোচ্চ শাস্তি’র দাবি করে। কিন্তু বিচারক সাজা ঘোষণার সময় জানান, সিবিআইয়ের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন তিনি। এই ঘটনাকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ বলে মনে হয় না তাঁর। বিচারক জানান, তিনটি ধারাতেই সঞ্জয়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। আমৃত্যু জেলে থাকতে হবে তাঁকে। একই সঙ্গে সব মিলিয়ে এক লক্ষ টাকা জরিমানাও করা হয় সঞ্জয়কে।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)