• স্রোতের বিরুদ্ধে ‘ওঁরা’ তিন জন
    আনন্দবাজার | ২১ জানুয়ারি ২০২৫
  • এজলাসের লড়াই শেষ। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক-পড়ুয়াকে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া সঞ্জয় রায়ের শাস্তিও ঘোষণা করে দিয়েছেন বিচারক। তবু যেন কিছুটা স্বস্তিতে অভিযুক্ত পক্ষের প্রধান আইনজীবী সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘মক্কেলের’ প্রাণদণ্ড যে হয়নি, এই মামলায় সেটাই যেন অনেক! আমজনতার অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন যে, ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ অপরাধ হিসাবে ফাঁসির সাজা হবে সঞ্জয়ের। কিন্তু শেষমেশ আমৃত্যু কারাবাসের শাস্তি হয়েছে তার। সেই রায় ঘোষণার পরেই, সোমবার বিকেলে সৌরভ বললেন, ‘‘তদন্তে কিছু ফাঁক রয়েছে। সেই সূত্র ধরে সওয়াল করে বিচারকের মনে তথ্যপ্রমাণ নিয়ে সামান্য হলেও সংশয় তৈরি করতে পেরেছি। তাই ফাঁসি না দিয়ে আমৃত্যু কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছে কোর্ট।’’

    সঞ্জয় নিজে আইনজীবী দাঁড় করাতে পারেনি। তাই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের প্যানেল থেকে সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, কবিতা সরকার, সেঁজুতি চক্রবর্তী অভিযুক্তের আইনজীবীর দায়িত্ব নেন। তার পর থেকেই তাঁরা রীতিমতো কোমর বেঁধে লড়ে গিয়েছেন এজলাসে।

    মামলার দায়িত্ব নেওয়ার পরেই জেলে সঞ্জয়ের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন আইনি পরিষেবার ‘চিফ ডিফেন্স কাউন্সেল’ সৌরভ। তিনি বলছেন, ‘‘মামলা লড়ার আগে ওর সঙ্গে অনেক কথা বলেছিলাম। ও কিন্তু গোড়া থেকেই ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেছিল।’’ সঞ্জয়ের আইনজীবীদের দলে ছিলেন কবিতা সরকারও। এ দিন শেষ বেলাতেও শাস্তি ঘোষণার আগে সওয়ালে ‘শেষ কামড়’ দিতে ছাড়েননি তিনি। এজলাসে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘যেখানে তদন্ত পুরো শেষ হয়নি, সেখানে সাজা ঘোষণা হবে কী ভাবে?’’ যদিও সেই যুক্তি মানেনি আদালত। বরং শাস্তি ঘোষণার আগে এই প্রশ্নে বিচারক দৃশ্যত বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন।

    রাঁচীর আইন কলেজের স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতকোত্তর পাশ করা সৌরভ ২০ বছর ধরে আইনজীবীর পেশায় রয়েছেন। বহু মামলা লড়েছেন। কিন্তু আর জি কর মামলা বোধহয় তাঁর কর্মজীবনের অন্যতম মাইলফলক হয়েই থাকবে। অনেকেই বলছেন, দেশকে নাড়িয়ে দেওয়া এই মামলায় অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী হয়ে স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সহজ কাজ নয়। বিশেষ করে, গোড়া থেকেই যে ভাবে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নাগরিকেরা এককাট্টা হয়ে পথে নেমেছিলেন। তবে, পথেঘাটে যা-ই হোক না কেন, আদালতের লড়াইটা ‘সম্পূর্ণ ভিন্ন’ বলেই মনে করেন সঞ্জয়ের আর এক আইনজীবী সেঁজুতি চক্রবর্তী। তিনি বলছেন, ‘‘আলাদা করে কিছুই মনে হয়নি। বরং আর পাঁচটি মামলার মতোই এটি একটি মামলা মাত্র। কোর্টের বাইরে কে, কী বললেন, তার সঙ্গে এজলাসের আইনি লড়াইয়ের সম্পর্ক নেই।’’ তুলনায় নবীন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনীর সওয়াল শুনে ঘনিষ্ঠ মহলে প্রশংসা করেছেন শিয়ালদহ কোর্টের অনেক প্রবীণ আইনজীবীও।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)