সংবাদদাতা, রামপুরহাট: দোকানে ঢুকে পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি দিয়ে সর্বস্ব লুট করে বাইক নিয়ে চম্পট দিল দুষ্কৃতীরা। সোমবার রাত আটটা নাগাদ এমনই দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে মুরারই থানার রাজগ্রামের একটি লটারি এজেন্সির দোকানে। দিন কয়েকের ব্যবধানে এই থানার গুসকিরা গ্রামেও অনলাইন ডেলিভারি সংস্থায় চুরির ঘটনা ঘটে। কখনও আবার দোকানের সামনে থাকা বাইক নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। একের পর এক ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, দুষ্কৃতীদের সাহস দেখে মনে হচ্ছে, তারা সরাসরি পুলিসকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে। যদিও পুলিস জানিয়েছে, তারা ডাকাতির কিনারা করতে তদন্ত শুরু করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজগ্রাম থেকে বহুতাল গ্রাম যাওয়ার রাস্তার ধারে জনবহুল এলাকায় ওই লটারি এজেন্সির দোকান। সোমবার রাত আটটা নাগাদ দু’টি বাইকে চেপে আসা চার দুষ্কৃতী হঠাৎই দোকানে ঢুকে সাটার নামিয়ে দেয়। এরপর সিসি ক্যামেরাকে পরোয়া না করে চারজন কর্মীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দেয় ও মারধর করে ক্যাশ বাক্স থেকে ৫০ হাজারেরও বেশি টাকা লুট করে এবং ছ’টি মোবাইল নিয়ে মুর্শিবাদের রাস্তা ধরে অন্ধকারে মিশে যায়। যাওয়ার আগে দুষ্কৃতীরা বাইরে থেকে দোকানের সাটার নামিয়ে দেয়। পরে খবর পেয়ে দোকানে আসে পুলিস। তারা লুট করা মোবাইলের লোকেশন ট্রাক করে দুষ্কৃতীদের খোঁজে নামে। অবশেষে মুর্শিদাবাদের শ্রীধরি গ্রামে ঢোকার আগে কাঁদুয়া ব্রিজের নীচ থেকে পাঁচটি মোবাইল উদ্ধার করে পুলিস। তবে দুষ্কৃতীদের কারও সন্ধান পায়নি। পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, দুষ্কৃতীরা পটু। পুলিস মোবাইল ট্রাক করে পিছু নিতে পারে, এটা ভেবে তারা পুলিসকে বিভ্রান্ত করে কাঁদরের নীচে মোবাইলগুলি ফেলে যায়। একটি মোবাইল পাওয়া যায়নি।
দোকানের কর্মচারী পাপ্পু কর্মকার জানান, চার দুষ্কৃতীর মধ্যে দু’জনের মাথায় হেলমেট ছিল। বাকি দু’জনের মুখে মাফলার জড়ানো ছিল। তার মধ্যে একজন খোঁড়া ছিল। তারা হিন্দি ও বাংলা ভাষা মিলিয়ে কথা বলছিল। সকলের পরনে ছিল জ্যাকেট, পায়ে ছিল বুট। চার যুবকের হাতেই ছিল পিস্তল।
ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ের বাসিন্দা দোকানের মালিক মণীশ কুমার বলেন, আমি দোকান থেকে বাড়ি যাওয়ার পর দু’জন পেমেন্ট করতে এসেছিল। তাঁদের দেওয়া ৫০ হাজারের কিছুটা বেশি নগদ টাকা ছিল। দুষ্কৃতীরা দোকানে ঢুকে পিস্তল দেখিয়ে কর্মীদের মারধর করে সেই টাকা নিয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুমান, দুষ্কৃতীরা মুর্শিদাবাদের। সিসি ক্যামেরা থাকা সত্ত্বেও তার হার্ডডিস্ক না নেওয়ার ঘটনা ডাকাতদলের বেপরোয়া মানসিকতারই প্রকাশ। যদিও রাতভর মুর্শিদাবাদ ও ঝাড়খণ্ড সীমানায় নাকা চেকিং জোরদার করলেও দুষ্কৃতীদের হদিশ পায়নি পুলিস। তারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজকে হাতিয়ার করে ডাকাতির কিনারায় নেমেছে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ জানুয়ারি রাতে মুরারইয়ে গুসকিরা গ্রামে জনবহুল এলাকায় থাকা অনলাইন ডেলিভারি সংস্থার অফিসে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটে। ভেন্টিলেটর ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে বেশ কিছু মোবাইল সহ দামি সামগ্রী চুরি নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। তার কিছুদিন আগে রাজগ্রাম বাজারের মধ্য থেকে একটি দোকানের সামনে থাকা বাইক নিয়ে চম্পট দেয় দুই চোর। দু’টি ক্ষেত্রেই পুলিস সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দুষ্কৃতীদের হদিশ নেই পুলিসের কাছে।