• ওয়াকফ ও সংখ্যালঘু বিত্ত নিগম নিয়ে মমতার পাল্টা ভাষ্য তৈরির কৌশল, ফোনে ব্রিগেড ঘোষণা নওশাদের
    আনন্দবাজার | ২২ জানুয়ারি ২০২৫
  • ওয়াকফ স‌ংশোধনী বিল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে সরব তৃণমূল। কলকাতার রাজপথে সমাবেশও করেছে বাংলার শাসকদল। তার পর সম্প্রতিই সংখ্যালঘু বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান পদ থেকে আইএএস অফিসার পিবি সেলিমকে সরিয়ে ইটাহারের বিধায়ক মোশারফ হোসেনকে দায়িত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার শহিদমিনারের সমাবেশ থেকে সেই ওয়াকফ এবং সংখ্যালঘু বিত্ত নিগম নিয়েই মমতার পাল্টা ভাষ্য তৈরি করার চেষ্টা করল নওশাদ সিদ্দিকির দল আইএসএফ।

    যৌথ সংসদীয় কমিটিতে ওয়াকফ নিয়ে সবচেয়ে সরব তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়ে কাচের গ্লাস ভেঙে হাতের আঙুল ফালাফালা করেছিলেন কল্যাণ। সেই প্রসঙ্গ তুলেই আইএসএফের প্রথম সারির নেতা নকিবউদ্দিন মীর সমাবেশে বলেন, ‘‘লোক দেখানোর জন্য কাচের গ্লাস ভেঙে হাত কাটছেন কল্যাণবাবু। তার পর ওই হাত দিয়েই হিন্দুত্বের ‘পোস্টার বয়’ যোগী আদিত্যনাথের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিচ্ছেন।’’ যদিও নকিবউদ্দিনের কথায় আমল দিতে চাননি কল্যাণ। তাঁর কথায়, ‘‘উনি কে যে ওঁর কথার জবাব দিতে যাব? এ সব লোকের কী রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ওয়াকফ নিয়ে যা লড়ার আমরাই লড়ছি। আর ওরা জাঙ্গিপাড়াতেই ঘরে ঢুকে গিয়েছে।’’ ঘটনাচক্রে, নওশাদ ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা। আবার এই ফুরফুরা জাঙ্গিপাড়ার অন্তর্গত। যে বিধানসভা কল্যাণের লোকসভা কেন্দ্র শ্রীরামপুরের মধ্যে পড়ে।

    আইএসএফের সমাবেশ থেকে সংখ্যালঘু বিত্ত নিগম নিয়েও তীব্র আক্রমণ শানানো হয়েছে। দলের নেতা কুতুবউদ্দিন বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু বিত্ত নিগমকে ঘুঘুর বাসায় পরিণত করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে হবে।’’ তাঁর এ-ও অভিযোগ, সংখ্যালঘু ছেলেমেয়েদের অপরাধের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। নেপথ্যে শাসকদলের ভূমিকাকেই দায়ী করেছেন তিনি। পাল্টা মোশারফ বলেন, ‘‘হাওয়ায় কথা বলে লাভ নেই। সংখ্যালঘু বিত্ত নিগম বাংলায় যে কাজ করেছে, তা একপ্রকার বিপ্লবের মতো। বিপুল সংখ্যক সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রী এই বিত্ত নিগমের দ্বারা উপকৃত হয়েছেন। ওঁরা বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য এ সব বলছেন।’’

    দলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে শহিদ মিনার ময়দানে সভা ডেকেছিল আইএসএফ। যদিও সোমবার পর্যন্ত এই সভা হওয়া নিয়ে আইনি জট ছিল। রবিবার পর্যন্ত আইএসএফের কাছে কলকাতা পুলিশের প্রয়োজনীয় অনুমতি ছিল না। অবশেষে সোমবার হাই কোর্টে মামলা করেন নওশাদ। আদালত শর্তসাপেক্ষে সভার অনুমতি দেয় আইএসএফকে। তার মধ্যে অন্যতম শর্ত ছিল, নওশাদ সশরীরে সভায় থাকতে পারবেন না। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে আইএসএফের প্রতিষ্ঠা দিবসের সভা থেকেই ধর্মতলায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। তা ধুন্ধুমার আকার নেয়। ওই দিনই নওশাদকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তার পর তাঁকে ৪২ দিন হাজতবাস করতে হয়েছিল।

    শহিদ মিনারে নওশাদ আহূত সভায় ভিড় হয়েছিল চোখে পড়ার মতো। দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি এবং পূর্ব মেদিনীপুর থেকে সংগঠিত জমায়েত হয়েছিল। সেই সভাতেই ফোন বার্তায় বক্তৃতা করেন নওশাদ। তাঁর দাবি, ‘ষড়যন্ত্র’ হয়েছিল যাতে তাঁরা সভা না করতে পারেন। কিন্তু সেই জাল তাঁরা ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছেন। ফের এক বার বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে বোঝাপড়ার অভিযোগ করেছেন ভাঙড়ের বিধায়ক। পাশাপাশিই, শহিদ মিনারের জমায়েত থেকে নওশাদ ঘোষণা করে দিয়েছেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে ব্রিগেডে সমাবেশ করবেন তাঁরা। সেখানে থাকবেন দলের প্রতিষ্ঠাতা পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকিও।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)