• সীমান্ত মাত্র ৩ কিমি দূরে, বাংলাদেশে পালানোর আগেই আব্দুলকে পাকড়াও
    বর্তমান | ২২ জানুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রায়গঞ্জ: পাঞ্জিপাড়ায় পুলিসের উপর হামলার পর থেকেই ঘন ঘন ডেরা পাল্টে ছিল বাংলাদেশি আব্দুল হোসেন ওরফে আবাল। কখনও করণদিঘি ব্লকের মহেশপুর, ছাগলকাটি, ভবানীপুর, আবার গোয়ালপোখরের সাহাপুর। পুলিসের হাত থেকে বাঁচতে একইসঙ্গে নামও পরিবর্তন করে আবাল। শেষে বাংলাদেশ সীমান্তের তিন কিমি আগে দোমহনা গ্রাম পঞ্চায়েতের বারহাঁস এলাকা বা তার আশপাশের অঞ্চলে কোথাও আত্মগোপন করে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। টেকনিক্যাল সাপোর্ট ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিস আব্দুলকে বাগে আনে। বারহাঁস ভাঙ্গাবাড়ি থেকে তাঁকে গোয়ালপোখর থানার পুলিস গ্রেপ্তার করে। স্থানীয়দের বক্তব্য, আব্দুল আর একটু হলেই পুলিসের হাত থেকে ফসকে যেত। রবিবার রাতেই হয়তো সে সীমান্ত টপকে ঢুকে পড়ত বাংলাদেশে। পুলিস জানিয়েছে, আব্দুলকে এদিন ইসলামপুর মহকুমা আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে ১০ দিনের জন্য পুলিস হেফাজতে পাঠিয়েছে।।


    এদিকে পুলিসের সন্দেহ, ছোট সোহার এলাকায় শ্বশুরবাড়ির পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে ভারতের নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র তৈরি করার ছক কষেছিল আবাল। আর এই বিষয়টি নিয়েই সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন বিজেপির স্থানীয় সংখ্যালঘু সেলের নেতা গোলাম সব্বার। তিনি আবার রাজ্যের মন্ত্রী গোলাম রব্বানীর ভাই। সার্বিক বিষয় নিয়ে ইসলামপুরের পুলিস সুপার জবি থমাস বলেন, সবেমাত্র আব্দুলকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তাতে নথিপত্র জাল করার বিষয়টিও দেখা হতে পারে।


    পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে খবর, আব্দুলকে বারহাঁস বলে যে জায়গা থেকে পুলিস গ্রেপ্তার করে তার থেকে দু’তিনটি গ্রাম্য পথ ও একটি নদী টপকাতে পারলেই বাংলাদেশ। আবাল যদি কোনওভাবে রুদেল, ভোকলা, ভাওয়াডাঙ্গি, এলাকা পেরোতে পারত, তাহলে আর পুলিস ওর নাগাল পেত না। সাজ্জাক গোয়ালপোখর দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টায় ছিল বলে সে পুলিসের নজরে পড়ে যায়। শেষে পুলিস এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় তার। তাই বাংলাদেশে ঢোকার অন্য পথ বেছে নেয় আব্দুল। আগেও পুলিস সূত্রে বলা হয়েছিল আব্দুল বাংলাদেশ সীমান্ত টপকাতে যথেষ্ট পটু ছিল। সেই দক্ষতার জন্যই ও মাদক পাচারকারী হিসেবে সীমান্ত এপার ওপার করত। তার প্রমাণ পুলিস আগেই হাতেনাতে পেয়েছে। মাস দু’য়েক আগে পর্যন্ত আবাল রায়গঞ্জ জেলা সংশোধনাগারে সাজ্জাকের সহবন্দি হিসেবে ছিল। তাকে মুর্শিদাবাদ জেলে স্থানান্তর করা হলে সেখান থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু আবার সীমান্ত টপকে সহজেই এদেশে ঢুকে পড়ে। 


    অন্যদিকে পুলিস সাজ্জাকের পলায়ন কাণ্ড নিয়ে আরও কয়েকজনের সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরছে। গত বুধবার থেকে পাঞ্জিপাড়া কাণ্ডের কিনারা করতে উত্তর দিনাজপুরের দুই পুলিস জেলার বাহিনী, এসওজি, বেঙ্গল এসটিএফ ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রত্যন্ত বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় রাতের পর রাত ডেরা তৈরি করে নজরদারি চালিয়েছে। সাদা পোশাকের বাহিনীও বহু সীমান্তবর্তী এলাকায় কাজ করছে। বহু এলাকায় পুলিস, বাইক, প্রাইভেট গাড়ি, বাস সর্বত্র যাত্রী ও চালকদের জোরদার ফেস চেকিং করেছে। শীতের জন্য মাফলার, টুপি সরিয়ে মানুষের ঢেকে থাকা মুখ দেখোর ফল হাতেনাতে পেয়েছে পুলিস। পাঞ্জিপাড়া কাণ্ডে দুই চক্রী পুলিসের জালে ধরা পড়েছে। এনকাউন্টারে মৃত্যু হয়েছে মাস্টারমাইন্ড সাজ্জাকের। আদালতের পথে আব্দুল। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)