নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: ডাক্তার হতে ক্যাম্পাসে ‘দাদা’ ধরার দরকার নেই। জলপাইগুড়ি মেডিক্যালে এসে পড়ুয়াদের এমনই বার্তা দিলেন গ্রিভেন্স রিড্রেসাল কমিটির সদস্যরা। মঙ্গলবার মেডিক্যালের ছাত্রছাত্রী ও চিকিৎসক-শিক্ষকদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন তাঁরা। পড়াশোনা থেকে চিকিৎসা, কোথায় কী সমস্যা রয়েছে তা জানার চেষ্টা করে ওই কমিটি। বৈঠকে সরাসরি ‘থ্রেট কালচার’ শব্দটি উচ্চারিত না হলেও মেডিক্যাল কলেজে ওসব যে চলবে না, তা নিয়ে কড়া বার্তা দেন ওই কমিটির চেয়ারম্যান ডাঃ সৌরভ দত্ত। তিনি বলেন, জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালাবেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। আর মেডিক্যাল কলেজ চালাবেন প্রিন্সিপাল। বাইরের কেউ নন। ডাক্তারি পড়ুয়াদের উদ্দেশে তাঁর স্পষ্ট বার্তা, ডিগ্রি অর্জন করতে কোনও ‘দাদা’ ধরার দরকার নেই। মন দিয়ে পড়াশোনা করলেই হবে। যতটা সম্ভব শিখে নিতে হবে শিক্ষক-চিকিৎসকদের কাছ থেকে। পড়াশোনা করে পরীক্ষায় বসতে হবে। মাথায় রাখতে হবে ডাক্তারি পরীক্ষা যেন সাধারণের কাছে ‘হাস্যকর’ না হয়ে দাঁড়ায়।
বৈঠকে চিকিৎকদের বদলি নীতি, ডাক্তারি পরীক্ষা পদ্ধতি, অভিযোগ গ্রহণ নিয়ে মেডিক্যালের অভ্যন্তরীণ কমিটি, ডাক্তারি পড়ুয়াদের ল্যাবের পরিকাঠামো সহ নানা বিষয় উঠে আসে। জলপাইগুড়ি মেডিক্যালে রোগীর চাপ এবং তুলনায় চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা কম থাকার প্রসঙ্গ তোলেন কয়েকজন চিকিৎসক। বৈঠক শেষে গ্রিভেন্স রিড্রেসাল কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা সবার কথা শুনেছি। যেসব সমস্যা স্থানীয়ভাবে মিটিয়ে দেওয়া সম্ভব, তা করা হয়েছে। যেসব সমস্যা রাজ্যস্তর ছাড়া মেটানো যাবে না, সেগুলি আমরা নোট করেছি। আর কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলি দীর্ঘমেয়াদি। সবটাই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরেও চেয়ারম্যান বলেন, ডাক্তারি পড়ুয়াদের বলেছি, মন দিয়ে পড়াশোনা করে পরীক্ষা দাও। ডিগ্রি অর্জন করো। এর জন্য কোনও ‘দাদা’ ধরতে হবে না।
জলপাইগুড়ি মেডিক্যালের ডাক্তারি পড়ুয়াদের তরফে এদিন স্বাস্থ্যক্ষেত্রে রাজ্যের ‘অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি’র সামনে বলা হয়, শিক্ষকরা ক্লাসে ঠিকমতো পড়াচ্ছেন। কিন্তু ল্যাবে কাজ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, পরিকাঠামোর ঘাটতি রয়েছে। অথচ পরীক্ষার সময় আমাদের উপর সাঁড়াশি চাপ নেমে আসছে। একগাদা সিসি ক্যামেরা বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এদিকটাও যেন দেখা হয়। কমিটির সামনে এক চিকিৎসক বলেন, গ্রামের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেসব রোগীর চিকিৎসা সম্ভব, তাঁরাও জলপাইগুড়ি মেডিক্যালে চলে আসছেন। ফলে মেডিক্যালে রোগীর চাপ সামলানো যাচ্ছে না। সারাক্ষণ ওয়ার্ড খালি করার কথা মাথায় রাখতে হচ্ছে, না হলে নতুন রোগী ভর্তি নেওয়া যাবে না। এমনটা না হলে আরও ভালো করে চিকিৎসা করা সম্ভব হতো। রেফারের কারণে রোগীদের একাংশকে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরতে হচ্ছে, এটাও দেখা দরকার।