• নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে অন্যদেরও আয়ের পথ দেখাচ্ছেন মাম্পি
    এই সময় | ২২ জানুয়ারি ২০২৫
  • চাঁদকুমার বড়াল, কোচবিহার

    প্রতি মাসে স্বামী যে টাকা দিতেন তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন কোচবিহারের মাথাভাঙ্গার উত্তর রামঠেঙ্গা গ্রামের মাম্পি গোপ। দুই ছেলেমেয়ের পড়াশোনা, প্রাইভেট টিউটর, ছাড়াও বিপদে আপদে আত্মীয়স্বজনদের সাহায্য করে এঁটে উঠতে পারছিলেন না তিনি। ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়েছেন। কী করবেন? পরিচিত এক দাদার পরামর্শে গ্রামের বাড়িতে শুরু করেন ‘ঘি’ তৈরি।

    মাথাভাঙ্গা ছাড়িয়ে সেই ‘ঘি’ এখন পাড়ি দিচ্ছে কোচবিহার শহর শুধু নয় আলিপুরদুয়ার জেলায়। হাটবাজারে ছোট বড় দোকান, বিভিন্ন সরকারি মেলায় ডাক পড়ছে তাঁর। কয়েক বছরে নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেনই, আরও দশ জন মহিলার কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। কিছু কেনার জন্য স্বামীর মুখাপেক্ষী না থেকে এখন তাঁরা উল্টে বাড়ির কর্তাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেন। মাম্পিদের আয় এখন মাসে লক্ষাধিক টাকা ছাড়িয়েছে।

    ২০১৭ সালে তিনি নিজের বাড়িতে বসে ঘি তৈরির কাজ শুরু করেন। সেই ঘি কৌটোয় ভরে আশপাশের হাটবাজারে নিয়ে যেতেন। সময়ের পরিবর্তনে সেই ‘ঘি’–এর সুবাস গ্রাম ছাড়িয়ে শহরে পৌঁছেছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিবেশী আরও কয়েক জন মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করেন। ফান্ডের জন্য যোগাযোগ করেন সরকারি দপ্তরে। পরে কোচবিহার জেলা গ্রামোন্নয়ন দপ্তরে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন। সেখানেই তাঁদের শেখানো হয় প্যাকেজিং ও লেবেলিং–এর খুঁটিনাটি। ব্যাস, এরপর আর তাঁদের ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার এই দুই জেলার বড় বড় মিষ্টির দোকানে মিলছে রামঠেঙ্গা গ্রামের তৈরি ঘি।

    বছর চল্লিশের মাম্পি বলেন, ‘মেয়ে ফালাকাটা কলেজে পড়ে। ছেলে মাধ্যমিক দেবে। ওরা যাতে ভালো ভাবে পড়াশোনা করতে পারে তাই কিছু করতে চাইছিলাম। দাদার পরামর্শে বাড়িতে বসে ঘি তৈরি শুরু করি। প্রথমে দু’চার কেজি ঘি তৈরি করে বিক্রি করতাম। নিজেই বাজারে নিয়ে যেতাম। এখন প্রতি মাসে প্রায় দেড়শো কেজির বেশি ঘি তৈরি হয়। সরকারি মেলা থাকলে অতিরিক্ত ১০০ কেজি। বিভিন্ন বাজারে ঘি নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এখন অনেকেই ফোনে অর্ডার দেন। গ্রামের মেয়েরা এই কাজের যুক্ত হয়ে আর্থিক ভাবে সচ্ছল হয়েছেন।’

    তাঁর সংযোজন, ‘মাসে অন্তত ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা নিজে যেমন রোজগার করি অন্য সদস্যদেরও মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় হয়। দুই ছেলেমেয়ের পড়াশুনোর কাজে এই টাকা যেমন লাগে পাশাপাশি সংসারের অন্য খরচও সামলাতে হয়।’ শুধু নিজের পায়ে দাঁড়ানো নয়, মাম্পি এখন পথ দেখাচ্ছেন গ্রামের অন্য মহিলাদেরও।

  • Link to this news (এই সময়)