কৌশিক সেন, রায়গঞ্জ
এ যেন ‘বাই ওয়ান, গেট ওয়ান ফ্রি’। গত এক সপ্তাহে উত্তর দিনাজপুরের ৯টি থানায় মাঝারি অথবা বড় ধরনের কোনও গন্ডগোল, মারপিট, ছিনতাইয়ের অভিযোগ পুলিশের কাছে জমা পড়েনি। সাম্প্রতিক কালে রাতের দিকে রায়গঞ্জ শহরে বাইকে ‘রোমিও’দের দৌরাত্ম্য চরম আকারে পৌঁছয়। এক সপ্তাহ ধরে তারাও ডুব দিয়েছে। রাতারাতি রাস্তা থেকে উধাও হয়েছে তারা। কোথাও পুলিশকে সামান্য বাধার মুখে পড়তে হয়নি।
জেলা পুলিশের অনুমান, এ সবই সম্প্রতি গোয়ালপোখরে সাজ্জাক আলির এনকাউন্টারের ‘সাইড এফেক্ট’। এই এফেক্ট যত বেশিদিন বজায় থাকে ততই মঙ্গল বলে মনে করেন উত্তর দিনাজপুরে বিভিন্ন থানায় দীর্ঘদিন চাকরি করা অবসরপ্রাপ্ত ডিএসপি সুজিত ঘোষ। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন রকম চাপের মধ্যে পুলিশকে কাজ করতে হয়। ফ্রি–হ্যান্ড পেলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ও দুষ্কৃতীদের দমন করতে পুলিশ কী করতে পারে তা দেখা গিয়েছে। এ বার কিছুদিন দুষ্কৃতীরা ক্রাইম করার আগে দু’বার ভাববে।’ তাঁর সংযোজন, ‘২০০১ সালে রায়গঞ্জ শহরে শিবপ্রসাদ–সহ দুই দুষ্কৃতীকে পুলিশ এনকাউন্টার করার সময়ে আমি করণদিঘি থানায় ছিলাম। রায়গঞ্জ শহরের এনকাউন্টারের এফেক্ট তখনও পেয়েছি।’
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক বছরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে বা দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করার সময়ে পুলিশকে বিভিন্ন সময়ে একাধিক বার হামলার মুখে পড়তে হয়েছে। ২০২৪ সালের ২৬ এপ্রিল এক দুষ্কৃতীকে ধরতে চোপড়া থানার আমতলা এলাকায় গিয়ে আক্রমণের মুখে পড়ে পুলিশ। দুষ্কৃতীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ২ জন সাব ইনস্পেক্টর, ২ জন কনস্টেবল ও পুলিশের গাড়ির চালক মারাত্মকভাবে আহত হন। ওই বছর ১৬ মে করণদিঘি থানা এলাকায় বালি পাচার রুখতে গিয়ে ভূমি রাজস্ব দপ্তরের এক আধিকারিক নিগৃহীত হন।
২০২১ সালের ২৯ জুলাই করণদিঘি থানার সামনে ১২ নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধ তোলার সময়ে কিছু দুষ্কৃতী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ভিড়ে মিশে গিয়ে পুলিশকে আক্রমণ করে। এতে ১২ জন পুলিশকর্মী আহত হয়। ২০২২ সালের ৭ জুলাই গোয়ালপোখর থানার মজলিসপুর এলাকায় অভিযুক্তকে ধরতে গেলে দুষ্কৃতীদের হামলায় ৩ জন পুলিশকর্মী আহত হয়। ২০২৩ সালের এপ্রিলে কালিয়াগঞ্জ থানা আক্রমণ করা হয়। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি থানায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশকর্মীদেরও পেটানো হয়। রায়গঞ্জ শহরের শিলিগুড়ি মোড় এলাকায় এক স্কুল ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়।
গত এক মাসে জেলার ৯টি থানায় একাধিক ছিনতাই, মারামারির ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে। গত ২৬ ডিসেম্বর চোপড়া বাজার এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে ব্যাঙ্কের সামনে থেকে এক মহিলার টাকার ব্যাগ ছিনতাই হয়। ইসলামপুরে এক সিএসপি কর্মীর থেকে টাকা ছিনতাই হয়। এর পাশাপাশি যোগ হয়েছে রাতে রায়গঞ্জ শহরে রোমিওদের অত্যাচার। রাত ৯টা বাজতেই বেশকিছু যুবক বাইক নিয়ে শহরের রাস্তা দিয়ে ঝড়ের বেগে যাতায়াত করে। পুলিশ মাঝেমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান করলেও নজরদারি একটু শিথিল হতেই বাইকের অত্যাচার আগের মতোই শুরু হয়ে যায় বলে অভিযোগ।
১৫ জানুয়ারি গোয়ালপোখর থানার কিচকটোলা এলাকায় একটি ব্রিজের কাছে পুলিশ সাজ্জাক আলম নামে এক দুষ্কৃতীকে এনকাউন্টার করে। পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময়ে সে মারা যায়। এই ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে যাবত জেলার ৯টি থানা এলাকায় বড় বা মাঝারি ধরনের কোনও ক্রাইমের অভিযোগ থানায় জমা পড়েনি। সরাসরি কিছু না বললেও জেলার বিভিন্ন থানার পুলিশের বক্তব্য, অনেকদিন পর এই এনকাউন্টার হওয়ায় জেলার অপরাধীদের মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের ইমেজ়ও সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকটাই ভালো হয়েছে। পুলিশকর্মীদের ভাষায়, ‘বাই ওয়ান, গেট ওয়ান ফ্রি’।