আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের মামলায় সাজা ঘোষণার পরে গোটা রাজ্য তোলপাড়। শুধু নির্বিকার সঞ্জয় রায়। এবং সচেতনও।
সোমবার শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস সঞ্জয়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন। এরকম প্রতিটি রায় ঘোষণার পরেই সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে সরকারি কিছু নথিতে হাতের ছাপ দিতে হয়। এটাই দস্তুর। আদালত সূত্রের খবর, সোমবার সাজা ঘোষণার পরে সঞ্জয়ের সামনে যখন সেই নথি নিয়ে আসা হয়, সে হাতের ছাপ দিতে অস্বীকার করে। খবর যায় সঞ্জয়ের আইনজীবীদের কাছে। তার এক আইনজীবী সঙ্গে সঙ্গে এসে দেখা করে সঞ্জয়ের সঙ্গে।
সাজা ঘোষণার পরে হাতের ছাপ দেওয়া বাধ্যতামূলক। তাকে সেটা দিতেই হবে। সঞ্জয় পাল্টা জানতে চায়, ‘এই ছাপ দিলে আমার কিছু হবে না তো?’ আইনজীবীর তরফে বোঝানো হয়, তার ফাঁসি হয়নি। আজীবন জেলে থাকতে বলেছেন বিচারক। সাজা যা–ই হোক না–কেন, তাকে হাতের ছাপ দিতেই হবে। এটা শুনে সে হাতের ছাপ দেয়। সূত্রের খবর, এই টানাপড়েনের ফলে আদালত থেকে প্রেসিডেন্সি জেলে ফিরতে রাত হয়ে যায় সঞ্জয়ের।
জেলে ফিরে রাতে রুটি–সবজি–ডাল খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সে। সঞ্জয়কে নিয়ে এখন তোড়জোড় শুরু হয়েছে জেলে। বিচারক তাকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। যার মেয়াদ শুরু হয়েছে সোমবার থেকেই। যেহেতু সশ্রম কারাদণ্ড, তাই নিয়ম অনুযায়ী তাকে জেলের ভিতরে কোনও না কোনও কাজে লাগাতে হবে। ঠিক যেমন অন্য সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিতরা জেলে কাজ করে। তবে, সঞ্জয়কে কোন কাজে নিয়োগ করা যায়, তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি জেল কর্তৃপক্ষ। সূত্রের খবর, ক্লাস টুয়েলভ পাশ সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয়ের এক্সট্রা–কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটি কী আছে, সেই হিসেবে তাকে কাজে নিয়োগ করা হবে। প্রতিদিন ১১০ টাকা করে সে পাবে।
জেল সূত্রের খবর, সাজা শোনার পরে সঞ্জয়ের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে কোনও পরিবর্তন হয়নি। সিবিআই সূত্রে খবর, সঞ্জয় জেরার মুখেও ‘ওভার কনফিডেন্ট’ ছিল। সিবিআই আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, প্রথমে মনে হয়েছিল, সে একা কী ভাবে এ কাজ করতে পারে? কিন্তু জেরার সময়ে তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে মনে হয়েছে, তার পক্ষে এমন অপরাধ করাটা অসম্ভব নয়। সোমবার আদালতে সঞ্জয়কে গাড়ি থেকে নামানোর জন্য এক পুলিশকর্মী সাহায্য করতে চান। হাত বাড়িয়ে দেন। সঞ্জয় বলে, ‘হাত ধরতে হবে না। একাই নামতে পারব।’ পুলিশের কথায়, এ ভাবে প্রতিটি পদক্ষেপে তার বেপরোয়া মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে।