হাওড়া স্টেশনের সামনে গঙ্গার পাড় দখল করে হোটেল–রেস্তোরাঁ চালানোয় নদী দূষিত হওয়ার অভিযোগে জাতীয় পরিবেশ আদালতে (ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল বা এনজিটি) দায়ের হয় মামলা। সেই মামলার সূত্রে জানা গেল, স্টেশন সংলগ্ন গঙ্গা পেরোনোর যে জেটি রয়েছে, সেটি-সহ পুরো পরিকাঠামোই বেআইনি! কারণ, বন্দরের জমি জবরদখল করে চলছে হাজার হাজার যাত্রী পারাপার!
মামলায় জমি–মালিক ‘কলকাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি পোর্ট ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ’–এর হলফনামা তলব করে আদালত। হলফনামায় বন্দর কর্তৃপক্ষ হোটেল সম্পর্কে রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছে, সেগুলির কোনও অনুমোদন নেই। আর ‘হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি’-কে ‘জবরদখলকারী’ বলে উল্লেখ করেছে তারা। তাদের উচ্ছেদের নোটিসও দেওয়া হয়েছে বলে হলফনামায় জানানো হয়েছে।
অভিযোগ, তা সত্ত্বেও গত ছ’বছরে বন্দর কর্তৃপক্ষের থেকে কোনও অনুমোদন বা ইজারা নেয়নি ওই সমিতি। তাদের বিরুদ্ধেও নদী–দূষণের অভিযোগ আনা হয়েছে। সমিতির অধিকর্তা অজয় দে অবশ্য বলেন, ‘বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা বেশ ক’বার বৈঠক করেছি। কিন্তু উচ্ছেদ–নোটিসের বিষয়টা এখনও জানি না। আইনি পরামর্শ নিচ্ছি। নিজেদের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হবে।’
হাওড়া স্টেশনের পুরোনো প্ল্যাটফর্মের বাইরে গঙ্গার পাড়ে নানা ধরনের দোকান নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সেগুলি থেকে গঙ্গা দূষিত হচ্ছে বলে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে অভিযোগ জানান পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। এর প্রেক্ষিতে ২০০৭–এর সেপ্টেম্বরে পর্ষদ নির্দেশ দেয়, ২০০৮-এর জানুয়ারির মধ্যে দোকানগুলিকে গঙ্গার ধার থেকে সরাতে হবে। এই নির্দেশ মানা হয়নি জানিয়ে ২০১০ সালে এনজিটি–তে মামলা করেন সুভাষ। পরিবেশ আদালতও পর্ষদের মতোই দোকান সরানোর নির্দেশ দেয়। কিন্তু তা–ও মানা হয়নি। উল্টে হোটেলের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩০–এরও বেশি।
বন্দর কর্তৃপক্ষ হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিলেন, তাঁদের জমি জবরদখল করেই চলছে হোটেলগুলি। জমিটির ব্যাপারে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করে এনজিটি। সম্প্রতি সেই রিপোর্ট জমা পড়ে। কবে থেকে জমি জবরদখল করা হয়েছে, কবে উচ্ছেদের নোটিস গিয়েছে, হোটেলের নাম ধরে ধরে সে সব জানানো হয়েছে রিপোর্টে।
সেখানে বলা হয়েছে, জমিতে অফিস ও জেটি চালানোর জন্য বৈধ কাগজপত্র নেই সমিতির। বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জমি লিজ় বা জনস্বার্থে ব্যবহারের অনুমতিও নেয়নি তারা। যেহেতু তারা ভাড়া নিয়ে যাত্রী পারাপার করে, তাই বিনামূল্যে জমি ব্যবহারের অনুমতি তাদের প্রাপ্য নয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ সমবায় সমিতিকে উচ্ছেদের নোটিস দেয় ২০১৮–য়। তার পরেও সমিতির তরফে কিছু করা হয়নি বলে অভিযোগ।
হাওড়া থেকে দ্রুত কলকাতায় পৌঁছতে বহু যাত্রী ওই ফেরিঘাট দিয়ে লঞ্চে যাতায়াত করেন। মেট্রো চালুর পরে যাত্রী কিছুটা কমলেও এখনও দৈনিক ২৫ হাজার যাত্রী সেখান দিয়ে পারাপার করেন বলে সমিতি জানিয়েছে।