• টালির ঘর থেকে আকাশকে ছোঁয়ার স্বপ্ন ছোট্ট ডালিয়ার
    এই সময় | ২২ জানুয়ারি ২০২৫
  • আশিস নন্দী, বারাসত

    কথায় বলে ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন। তৃতীয় শ্রেণির খুদে পড়ুয়া, ৯ বছরের ডালিয়া বর কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সেই প্রবাদকে সত্যি প্রমাণ করে ছেড়েছে। সম্প্রতি অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে যোগা প্রতিযোগিতায় বালিকা বিভাগে প্রথম হয়েছে ডালিয়া। এ বার খুদে মেয়ের চোখ শ্রীলঙ্কায়। কয়েক মাস পরে সেখানেই বসতে চলেছে আন্তর্জাতিক যোগা প্রতিযোগিতা।

    বারাসতের নিবেদিতাপল্লিতে বাড়ি ডালিয়ার। বাবা রবি বর পেশায় রাজমিস্ত্রি। মা মিতা বাড়িতে সেলাই মেশিন চালিয়ে অভাবের সংসারকে টেনে নিয়ে চলেছেন স্বামীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। রেলবস্তির লাগোয়া টালি আর বেড়া দিয়ে তৈরি ডালিয়াদের ঘর। তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া ডালিয়ার ছোটবেলা থেকেই যোগার প্রতি আগ্রহ। স্থানীয় সৃজনী ক্লাবে যোগার হাতেখড়ি। মাত্র দু’বছরের মধ্যেই ডালিয়ার দক্ষতা নজর কাড়ে প্রশিক্ষক অরূপ সরকারের। গত বছর ডিসেম্বরে ইউনিভার্সাল যোগা স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে বসেছিল আন্তর্জাতিক যোগা প্রতিযোগিতার আসর। ১০টি দেশের প্রায় ২৫০ জন প্রতিযোগী অংশ নেয় সেই আসরে।

    কিন্তু ডালিয়ার স্বপ্নপূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল আর্থিক সঙ্কট। দুঃস্থ বাবার পক্ষে এত টাকা খরচ করে মেয়েকে সেই প্রতিযোগিতায় পাঠানোর সামর্থ্য কোথায়? শেষ পর্যন্ত দু’টি বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ৭০ হাজার টাকা ধার নেন রবি। মেয়ে হতাশ করেনি। আন্তর্জাতিক যোগা প্রতিযোগিতায় সেরার স্বীকৃতি নিয়ে ফিরেছে ছোট্ট পড়ুয়া। বালিকা বিভাগে প্রথম হয়েছে ডালিয়া। তার এই সাফল্যে উল্লসিত স্থানীয় ক্লাব এবং বামপন্থী যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই কর্মীরা।

    কিন্তু সেই উৎসবের আবহেও ফের দেখা গিয়েছে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ। শ্রীলঙ্কায় হতে চলেছে আন্তর্জাতিক যোগা প্রতিযোগিতা। বিদেশ সফরের সেই বিপুল টাকা আসবে কোথা থেকে? ডালিয়ার মা মিতা বর বলছিলেন, ‘প্রশিক্ষক অরূপ সরকার ছিলেন বলেই মেয়ে এত দূর পৌঁছতে পেরেছে। বিশাখাপত্তনমে মেয়েকে পাঠাতে আমরা ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। সেই টাকা এ বার শোধ করতে হবে। এত অভাবের মধ্যেই মেয়ে প্রথম হয়েছে। সেটাই আমাদের সেরা প্রাপ্তি।’ ডালিয়ার কথায়, ‘পড়াশোনার সঙ্গে যোগাও মন দিয়ে শিখছি। স্যর যে ভাবে বলছেন, সেই শিক্ষাই মেনে চলছি।’

    তার পরেই মেয়ের মুখ যায় শুকিয়ে। ‘এর পরের প্রতিযোগিতা রয়েছে শ্রীলঙ্কায়। সেখানে যেতে পারব কি না, জানি না।’ রবি বলেন, ‘আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করি। মেয়েকে একটু ভালো খাবার পর্যন্ত দিতে পারি না। শ্রীলঙ্কায় মেয়েকে পাঠানোর টাকা কী ভাবে জোগাড় করব, সেটাই এখন চিন্তার। সরকার বা কোনও সংগঠন যদি এগিয়ে আসে, তা হলে হয়তো মেয়ের স্বপ্নপূরণ হবে।’

    যে সৃজনী ক্লাব থেকে ডালিয়ার স্বপ্ন ডানা মেলতে শুরু করেছিল, সেই ক্লাবের সম্পাদক তারক দাস বলছেন, ‘ডালিয়ার ঘরের টালির চালের ফাঁক দিয়ে আকাশ দেখা যায়। আমরা চাই ডালিয়া সোনালি স্বপ্ন আরও বড় হয়ে আকাশকে ছুঁয়ে ফেলুক। ও যেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়। আমরা ক্লাবের পক্ষ থেকে ওর সঙ্গেই আছি।’ ডিওয়াইএফআইয়ের বারাসত লোকাল কমিটির সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘এইটুকু বয়সে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ায় ডালিয়াকে আমরা অভিনন্দন জানিয়েছি। আগামী শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার ক্ষেত্রেও আমরা সাহায্য করব।’

  • Link to this news (এই সময়)