এই সময়: রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠকগুলিতে বিশেষ একটা দেখা যায় না বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। মঙ্গলবারও সল্টলেকের একটি হোটেলে দলের কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল বনসলের ডাকা রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠকে তিনি হাজির ছিলেন না। যা নিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্য, বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠকগুলিতে শুভেন্দু ‘কমফর্ট ফিল’ করেন না।
কেন শুভেন্দু ‘কমফর্ট ফিল’ করেন না, সে ব্যাখ্যাও এ দিন দিয়েছেন সুকান্ত। নিজের দলের কোনও নেতার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে পাল্টা প্রতিক্রিয়া সাধারণত দেন না শুভেন্দু। এ দিন অবশ্য সুকান্তর মন্তব্যের জবাব দিতে দেরি করেননি তিনি। শুভেন্দু দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি বিজেপির কোনও সাংগঠনিক পদে নেই। ফলে দলের সব সাংগঠনিক বৈঠকে হাজির হওয়ার কোনও বাধ্যবাধকতাও যে তাঁর নেই, সে বার্তাই বস্তুত স্পষ্ট করেছেন তিনি।
দলের সাংগঠনিক বৈঠকে শুভেন্দুর হাজির না থাকা নিয়ে চর্চা এবং সেই প্রেক্ষিতে শুভেন্দুর মনে করিয়ে দেওয়া যে তিনি কোনও সাংগঠনিক পদে নেই— এই বিষয়টি বঙ্গ–বিজেপির সাংগঠনিক রদবদলের মুখে খুবই ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ, সব কিছু ঠিকঠাক চললে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বঙ্গ–বিজেপিতে সভাপতি পরিবর্তন হতে চলেছে।
এ দিন সাংগঠনিক বৈঠক শেষে সল্টলেকের ওই হোটেলের লনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সুকান্ত। সেখানে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, কেন শুভেন্দু অধিকারী বৈঠকে ছিলেন না? জবাবে তিনি বলেন, ‘শুধু এ বারই নয়, আগেও উনি আসতেন না। আমাদের সাংগঠনিক বৈঠকে উনি কমফর্ট ফিল করেন না।’
বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠকে শুভেন্দুর ‘কমফর্ট’ বোধ না করার কারণ ব্যাখ্যা করে সুকান্তর সংযোজন, ‘আমাদের সাংগঠনিক বৈঠক–প্রক্রিয়া দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে। ওঁর (শুভেন্দু) অনেক কর্মসূচি থাকে। উনি পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম ব্যস্ত নেতা। তাই তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে হয়। সময় পাবেন কী ভাবে!’
পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিতে দেরি করেননি বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। এ দিন সন্ধ্যায় তিনি সোদপুরে আরজি করের নির্যাতিতা তরুণী চিকিৎসকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শুভেন্দু প্রথমেই জানিয়ে দেন, এ দিন তাঁর রাজনৈতিক কর্মসূচি কী ছিল। বিরোধী দলনেতার মন্তব্য, ‘আমি আজ মেদিনীপুরে চিকিৎসকদের সাসপেন্ড করার বিরুদ্ধে কর্মসূচিতে ছিলাম। সবাই দেখেছে। আর আমি দলের কোনও সাংগঠনিক পদে নেই। আমি বিরোধী দলনেতা, নিজের কাজ সম্পর্কে সচেতন। যিনি এ সব বলেছেন, ব্যাখ্যা তাঁকেই দিতে হবে। আমি দিতে পারব না।’
২০২১–এর পর থেকেই বিজেপিতে সাংগঠনিক নেতাদের সঙ্গে পরিষদীয় দলের দড়ি টানাটানি চলছে। দলের বিধায়কদের একাংশের অভিযোগ, বিজেপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তাঁদের সামিল করা হয় না। পাল্টা অভিযোগ রয়েছে বিজেপির সাংগঠনিক নেতাদেরও। তাঁদের অনেকের বক্তব্য, বিধায়করা কোনও কর্মসূচি করলে দলের স্থানীয় পদাধিকারীদের কিছু জানান না। রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘এ দিন সুকান্ত মজুমদার যা বলেছেন এবং জবাবে শুভেন্দু যা বললেন, সবই আসলে আমাদের পরিষদীয় দল আর সাংগঠনিক নেতাদের বিরোধের ফলশ্রুতি।’