• উৎসব, কার্নিভাল সবই হচ্ছে, শুধু বইমেলাই বাদ দুর্গাপুরে
    এই সময় | ২২ জানুয়ারি ২০২৫
  • সঞ্জয় দে, দুর্গাপুর

    শীত যাই যাই করছে। প্রতিটি জেলা সদর এমনকী মহকুমা শহরগুলিতেও হচ্ছে বইমেলা। সব কটি মেলাতেই বইপ্রেমীদের ভিড় দেখা গিয়েছে। ব্যতিক্রম একমাত্র দুর্গাপুর। ২০২০ সালে শেষ বইমেলা হয়েছিল এই শিল্পশহরে। তার পর পাঁচ বছর পেরিয়ে গেল, বইমেলার স্বাদ পেলেন না শহরের মানুষ।

    অথচ মেলা দুর্গাপুরে কম হয় না। কোটি টাকা খরচ করে মেলা, খেলার আয়োজন করা হয় এখানে। কল্পতরু মেলা, রথের মেলার সঙ্গে কয়েকটি বইয়ের দোকান জুড়ে দিয়ে বইমেলা বলে চালানো হয় কিন্তু, পুরোদস্তুর বইমেলা থেকে ব্রাত্য দুর্গাপুর। মেয়রের চেয়ারে বসার পর বইমেলা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন দিলীপ অগস্তি। একপ্রকার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ২০১৯ সালে অল্প কয়েকদিনের নোটিসে সিধো কানহো ইন্ডোর স্টেডিয়ামের বাইরে বইমেলার আয়োজন করেছিলেন। বেশ সাড়া পড়েছিল সেবার।

    পরের বছর ২০২০ সালে ফের হয়েছিল বইমেলা। সে প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রাক্তন মেয়রের গলায় শোনা যায় আক্ষেপের সুর। তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় বছরে এক কোটি টাকারও উপর বই বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু এখন আর দুর্গাপুরে বইমেলা হয় না। খারাপ লাগে। পাশে রানিগঞ্জ, আসানসোল, মেজিয়াতেও বইমেলা হয়। তা হলে দুর্গাপুরে হবে না কেন? এখন আমি কোনও পদে নেই। তবে কেউ যদি বইমেলা করার উদ্যোগ নেয়, তা হলে আমি সবরকম ভাবে সহযোগিতা করব।’

    সম্প্রতি পূর্ব বর্ধমানের কালনায় বইমেলার উদ্বোধনে এসে প্রখ্যাত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘মানুষ বই পড়ছে না, এই কথাটা বিশ্বাস করি না। বরং আগেই কম পড়ত। এখন অনেক বেশি পড়ছে। এটা টের পাই যখন মানুষের কাছ থেকে সাড়া পাই।’ ২০১৯–এ দুর্গাপুর পুরসভার উদ্যোগে আয়োজিত বইমেলার উদ্বোধনে এসেও এমন মন্তব্য করেছিলেন বাঙালির প্রিয় এই সাহিত্যিক। তার পরই প্রতি বছর বইমেলা আয়োজনের কথা ঘোষণা করেছিল পুরসভা। বইমেলা না হওয়ায় হতাশা ঝরে পড়ে দুর্গাপুরের বাসিন্দা তথা রসায়নের শিক্ষক নরুল হকের গলায়।

    তিনি বলেন, ‘কত চেষ্টা করে দু’বছর বইমেলা করেছিলাম। কলকাতার একাধিক নামী প্রকাশনা সংস্থা অংশ নিয়েছিল মেলায়। এখন দুর্গাপুরে বইমেলাই হয় না। খারাপ তো লাগেই।’ দুর্গাপুর বইমেলা নিয়ে শহরের বাসিন্দা তথা লেখক রণজিৎ গুহর স্মৃতি এখনও টাটকা। তাঁর প্রশ্ন, ‘দারুণ সাড়া পাওয়া গিয়েছিল দুর্গাপুর বইমেলায়। এখন কলকাতা বইমেলার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। দুর্গাপুরে উৎসব হচ্ছে, স্পোর্টস কার্নিভাল, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেলা হচ্ছে। এত কিছু হচ্ছে, তা হলে বইমেলা কেন হবে না শহরে?’ হতাশ বইপ্রেমীরাও। স্টিল টাউনশিপের বাসিন্দা অরিন্দম দত্তর বক্তব্য, ‘দুর্গাপুর বইমেলায় নামী প্রকাশনা সংস্থাগুলি অংশ নিয়েছিল। সেই দু’বছর কলকাতা বইমেলায় যেতেই হয়নি। আমাদের এত বড় একটা শহর, অথচ এখানে বইমেলাই হয় না। ভাবতেই কেমন লাগে।’

    কেন দুর্গাপুরে বইমেলা করা যাচ্ছে না? এডিডিএ (আসানসোল–দুর্গাপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি)–র চেয়ারম্যান কবি দত্ত বলেন, ‘এখন তো ডিজিটালের যুগ। বাচ্চারা তো মোবাইলে সব পড়ছে। বইয়ের চাহিদা যদি থাকে তা হলে বইমেলা করতে কোনও অসুবিধে নেই।’ পুরসভার মুখ্য প্রশাসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘অনেক ধরনের মেলা হচ্ছে শহরে। মানুষ যদি বইমেলা চান, তা হলে চেষ্টা করা যেতে পারে।’

  • Link to this news (এই সময়)