কলকাতা শহরে ২০২৪ সালে সরকারি বাস দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে মাত্র ১ জনের। সেখানে ওই একই সময়কালে বেসরকারি বাস দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬৭ জন। লালবাজার সূত্রে খবর, ২০২৩ এবং ২০২২ সালে বেসরকারি বাস দুর্ঘটনার কারণে যথাক্রমে মৃত্যু হয়েছিল ২৪ ও ২১ জনের। অর্থাৎ, গত বছরে বেসরকারি বাস দুর্ঘটনায় মৃত্যু প্রায় তিন গুণ বেড়ে গিয়েছে।
মূলত ইএম বাইপাস, এপিসি রোড, গড়িয়াহাট রোড, এজেসি বোস রোড, ডায়মন্ড হারবার রোড, বিটি রোড পুলিশের কাছে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। লালবাজারের ট্র্যাফিক বিভাগের কর্তারা এই পরিস্থিতিতে বাস চালকদের নিয়ে কর্মশালার কথা ভাবছেন, যেখানে তাঁদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার রাতেও কলকাতায় বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে এক পথচারীর। রাত নটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে তপসিয়া থানা এলাকার ক্রিস্টোফার রোডে। মৃত মোহন রাম (৩৮) তপসিয়া এলাকারই বাসিন্দা। সূত্রের খবর, রাস্তার ধার দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ে একটি বেসরকারি বাস তাঁকে পিছন থেকে ধাক্কা মারে। স্থানীয়রা মোহনকে উদ্ধার করে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। ওই বেসরকারি বাসের চালককে আটক করেছে পুলিশ।
বেসরকারি বাসের দুর্ঘটনায় পরের পর মৃত্যুর ময়না–তদন্তে নেমে পুলিশ বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে অন্যতম, সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে যাত্রী তোলাকে কেন্দ্র করে রেষারেষির। তা ছাড়া, যে কোনও মেট্রো শহরের তুলনায় কলকাতায় রাস্তার আয়তন অনেক কম, শহরের মাত্র ৭ শতাংশ। সেই তুলনায় গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি।
অফিস টাইমে গাড়ির চাপ বেশি থাকার ফাঁকে ওভারস্পিডিং করতে গিয়েও অনেক সময়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছেন বেসরকারি বাসের চালকরা। আবার চালকদের একাংশের চোখের সমস্যা, স্টিয়ারিংয়ে বসে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়াও দুর্ঘটনার কারণ বলে দাবি পুলিশের। কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ট্র্যাফিক) শ্রীকান্ত জগন্নাথ রাও বলছেন, ‘যে সব কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে, তা বাস চালকদের সামনে তুলে ধরতে কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে। পথচারীদের সচেতন করতে বেশ কিছু কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।’
যদিও অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা বক্তব্য, সব দোষ বাস চালকদের উপর চাপিয়ে দেওয়াটা ঠিক নয়। কারণ, পথচারীদের একাংশ রাস্তার একপাশ বা ফুটপাত দিয়ে না হেঁটে বাসের সামনে চলে আসে। তখন চালক ইমার্জেন্সি ব্রেক ধরলেও লাভ হয় না। শহরের অনেক জায়গায় ফুটপাত হকারদের দখলে থাকার কারণে রাস্তায় পথচারীরা হাঁটতে বাধ্য হন। সে দিকে নজর দিলেও দুর্ঘটনা কমবে।