• নিরাপত্তা ও নজরদারি বাড়াতে বেঙ্গল সাফারিতে তৈরি হবে ফাঁড়ি
    এই সময় | ২২ জানুয়ারি ২০২৫
  • সঞ্জয় চক্রবর্তী ■ শিলিগুড়ি

    বেঙ্গল সাফারিতে ভিড় সামাল দিতে ফাঁড়ি গড়বে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট। মঙ্গলবার বেঙ্গল সাফারির দশম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে গিয়ে এ কথা জানিয়েছেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার সি সুধাকর। সালুগাড়ায় ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে বেঙ্গল সাফারি এলাকার আইন শৃঙ্খলার দিকে নজরদারি করে সিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ভক্তিনগর থানা। ওই থানার দূরত্ব বেঙ্গল সাফারি থেকে প্রায় চার কিলোমিটার।

    ফলে কোনও সমস্যা হলে পুলিশের ঘটনাস্থলে পৌঁছেই প্রায় ত্রিশ মিনিট সময় লেগে যাবে। সেখানে ফাঁড়ি তৈরি হলে বেঙ্গল সাফারি এলাকার মধ্যেই পুলিশ কর্মীদের পাওয়া যাবে। অন্যদিকে, ভিড়ের দিনে নজরদারির কাজে বেঙ্গল সাফারির কর্মীদের সাহায্য করতে পারবেন পুলিশ কর্মীরা। ফাঁড়ি তৈরির জন্য দরকার জমি। বেঙ্গল সাফারি কর্তৃপক্ষ জমির ব্যবস্থা করে দিলে ফাঁড়ি তৈরিতে কোনও সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার।

    বৈকুণ্ঠপুর বনাঞ্চলের প্রায় তিনশো হেক্টর জমিতে এই চিড়িয়াখানা গড়ে ওঠে ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেঙ্গল সাফারির উদ্বোধন করেন। বিশাল আয়তনের এই সাফারির চারপাশেও নজরদারি নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন বেঙ্গল সাফারি কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে সাফারির পিছনেই লোকালয় গড়ে ওঠায় নিরাপত্তা প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। পুলিশ কমিশনারের প্রস্তাব, গোটা এলাকায় নজরদারির জন্য বনকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের বাইক পেট্রোলিং চালু করা হোক।

    পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘এত লোকের যেখানে যাতায়াত সেখানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নজরদারির ব্যবস্থা থাকা দরকার। বেঙ্গল সাফারি কর্তৃপক্ষ জমির ব্যবস্থা করে দিলে আমরা এখানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি তৈরি করতে পারি। এমনকী, প্রায় তিনশো একরের সাফারিতে নজরদারির জন্য বন দপ্তরের কর্মীদের সঙ্গে যৌথ ভাবে বাইকে টহলের ব্যবস্থা করা সম্ভব।’ শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের এই প্রস্তাবে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন সাপারি কর্তৃপক্ষও।

    বেঙ্গল সাফারির ডিরেক্টর বিজয় কুমার বলেন, ‘জমি নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। বেঙ্গল সাফারিতে জমি রয়েছে। আমরা পুলিশ কমিশনারেটের সঙ্গে বৈঠক করে দ্রুত ব্যবস্থা করে ফেলব।’ 

    গত এক দশকে রাজ্যের একমাত্র এই মুক্ত চিড়িয়াখানাটি কেবল কলেবরেই নয়, দর্শক সংখ্যাতেও নজরকাড়া ফল করেছে। প্রতি বছর বেঙ্গল সাফারিতে আসেন প্রায় চার লক্ষ মানুষ। গড়ে বাৎসরিক আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯-১০ কোটি টাকা। বছরে যেখানে ব্যয় প্রায় ১২ কোটি টাকা। তবে কর্তৃপক্ষের আশা, আগামী দুই বছরে বেঙ্গল সাফারি লাভের মুখ দেখতে পারবে। বেঙ্গল সাফারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬১ প্রজাতির বন্যপ্রাণি রয়েছে এখানে। তার মধ্যে ৩৪টি প্রজাতি বিপন্ন বন্যপ্রাণের তালিকায় রয়েছে।

    সবচেয়ে বড় কথা, কৃত্রিম প্রজননে সাফল্য দেশের অনেক চিড়িয়াখানাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। মাত্র এক জোড়া রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার দিয়ে বেঙ্গল সাফারি পথচলা শুরু করে। আর এখন কৃত্রিম প্রজননের জেরে বেঙ্গল সাফারিতে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা এগারো। আরও আটটি রয়্যাল বেঙ্গল দেশের নানা চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয়েছে। বেঙ্গল সাফারির ডিরেক্টর বিজয় কুমার বলেন, ‘প্রথমে অনেকেই সংশয় ছিলেন যে এই সাফারিতে মানুষ আসবেন কি না। এখন সাফারিতে আর কী বিনোদনের ব্যবস্থা করা সম্ভব তা নিয়েই প্রতিদিন নানা পরিকল্পনা চলছে।’ 

  • Link to this news (এই সময়)