• নেতাজির স্মৃতি বিজড়িত চেয়ার আজও সংরক্ষিত পুরসভায়, উত্তাল সময়ে তমলুকে কেন এসেছিলেন সুভাষ?
    এই সময় | ২২ জানুয়ারি ২০২৫
  • সালটা ১৯৩৮। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে উত্তপ্ত গোটা দেশ। অল ইন্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লক তৈরির আগে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তখন কংগ্রেসের জাতীয় স্তরের নেতা। দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে বাংলার নানা প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি। সেরকমই একটি কর্মূসচিতে তমলুকে হাজির হন সুভাষচন্দ্র। মিটিং সেরে হাজির হন তমলুক পুরসভাতেও। আপ্যায়নের ত্রুটি রাখেননি স্থানীয়রা। যে চেয়ারে বসেছিলেন দেশনায়ক, সেই চেয়ার আজও সযন্তে বিদ্যমান পুরসভায়। ২৩ জানুয়ারি সেই চেয়ারেই ছবি রেখে নেতাজির জন্মদিন পালন করেন পুর কর্মীরা।

    ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অবিভক্ত মেদিনীপুরের মানুষ। মেদিনীপুরের তৎকালীন স্বদেশী নেতা ও কর্মীদের জন্য আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করে দিতেই তমলুকে পা রেখেছিলেন স্বয়ং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। রাজবাড়ির মাঠে স্থানীয় নেতাদের নিয়ে সভাও করেছিলেন তিনি। পরে তমলুক পুরসভা, বর্গভীমা মন্দির-সহ একাধিক জায়গায় গিয়েছিলেন।

    ১৯৩৮ সালের ১১ এপ্রিল কলকাতা থেকে পাঁশকুড়ায় প্রথমে ট্রেনে এবং সেখান থেকে গাড়িতে তমলুকে এসে পৌঁছন। প্রথমে ঠিক হয়, রাখাল মেমোরিয়াল মাঠে সভা করবেন তিনি। সেই মতো জমির মালিকের কাছ থেকে অনুমতিও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে ব্রিটিশ পুলিশ মালিককে ভয় দেখানোর ফলে অনুমতি প্রত্যাহার করে জমির মালিক। এমন পরিস্থিতিতে তমলুকের তৎকালীন রাজা সুরেন্দ্রনারায়ণ রায়ের শরণাপন্ন হন নেতারা। তিনি রাজবাড়ির খোসরঙ মাঠে আম গাছ কেটে সভা করার কথা বলেন। সেখানেই শেষমেশ সভা করেন নেতাজি।

    সে দিনের সভায় নেতাজি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সতীশচন্দ্র সামন্ত, অজয় মুখোপাধ্যায়, সুশীল ধাড়া, মহেন্দ্রনাথ মাইতির মতো তৎকালীন প্রথম সারির নেতারা। সভা সেরে নেতাজি গিয়েছিলেন তমলুক পুরসভায়। সেখানে একটি কাঠের চেয়ারে বসতে দেওয়া হয় নেতাজিকে। সেই চেয়ার বর্তমানে সংরক্ষিত করে রেখেছে পুরসভা।

    সভার পরে বর্গভীমা মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশনেও গিয়েছিলেন নেতাজি। মিশনের ‘ভিসিটরস বুক’-এ আজও রয়েছে নেতাজির নিজের হাতের লেখা। পরের দিন সকালে নেতাজি আটচালাতে রাজা সুরেন্দ্রনাথ রায়ের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে রওনা দেন মেদিনীপুরের উদ্দেশে। আজ থেকে প্রায় ৮৫ বছরের পুরনো স্মৃতি আজও উজ্জ্বল তমলুকের মানুষের কাছে। পুরসভায় সংরক্ষিত নেতাজির বসার চেয়ার আজও দেখতে ভিড় জমান বহু মানুষ।

    তমলুক রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্য তথা পুরসভার চেয়ারম্যান ডঃ দীপেন্দ্র নারায়ণ রায় বলেন, ‘এখনও বহু পর্যটক আসেন ওই চেয়ার দেখতে। রাজবাড়িতে নেতাজির আগমণ উপলক্ষে আমরা ইতিমধ্যে তাঁর মূর্তি বসিয়েছি। নেতাজি আমাদের তমলুক শহরে পা রেখেছিলেন। আমরা খুবই ভাগ্যবান। তাঁর জন্মদিন ধুমধাম করে গোটা তমলুকে পালন করবে।’

  • Link to this news (এই সময়)