শিক্ষক সংকট, স্কুলে ক্লাস করাচ্ছেন চক-ডাস্টার হাতে অশিক্ষক কর্মী
প্রতিদিন | ২২ জানুয়ারি ২০২৫
ধীমান রায়, কাটোয়া: স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১৪২ জন। শিক্ষক মাত্র একজন। তাই পড়ুয়াদের পঠনপাঠনের স্বার্থে নিজের কাজ সামলে ক্লাস নেন স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। এই প্রসঙ্গে স্কুলের টিচার ইনচার্জ মণিশঙ্কর নস্কর, “নেই মামার চেয়ে কানা মামা তো ভালো।” তাঁর আক্ষেপ, “আমাদের স্কুলের শিক্ষক নিয়োগের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু এখনও শিক্ষক, শিক্ষিকা পাইনি। খুব সমস্যার মধ্যেই স্কুলের পঠনপাঠন চালিয়ে যেতে হচ্ছে।”
কেতুগ্রাম ২ ব্লকের নতুনগ্রামে এই জুনিয়র হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ২০১০ সালের মার্চ মাসে। স্কুল সুত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন হয়। বর্তমানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৪২ জন। পঞ্চমে ৩০, যষ্ঠে ৩৪, সপ্তমে ২৬ ও অষ্টম শ্রেণিতে ৫২ জন পড়ুয়া। শিক্ষক রয়েছেন একজন এবং একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী রয়েছেন। চারটি শ্রেণির ক্লাস চালানোর দায়িত্ব একমাত্র শিক্ষক মণিশঙ্কর নস্করের কাঁধেই। কিন্তু তাঁকে প্রায়শই মিড-ডে মিল সংক্রান্ত ও অফিসের অন্যান্য কাজে যেতে হয়। তাই তখন নিজের দায়িত্ব সামলে ক্লাস নিতে হয় চতুর্থ শ্রেণির কর্মী জয়কৃষ্ণ প্রধানকে।
জয়কৃষ্ণবাবুর কথায়, “আগে তিনজন শিক্ষক, শিক্ষিকা ছিলেন। পরে দুজন বদলি হয়ে চলে যান। এদিকে স্যারকে বিভিন্ন কাজেই বাইরে যেতে হয়। তাই ছেলেমেয়েরা যাতে স্কুলছুট হয়ে না যায় সেজন্য আমি যতটা সাধ্য সামলে দেওয়ার চেষ্টা করি।” স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি নিয়ামল বসির বলেন, “একমাত্র শিক্ষক যিনি রয়েছেন তাঁকে অফিসিয়াল বিভিন্ন কাজে যেতে হয়। তাই সময় দিতে পারেন না। আমাদের পরিচালন কমিটির অনুরোধে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ক্লাস নেন। তিনি পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাসগুলি ভালোভাবেই নিতে পারেন। এটা আমরাও লক্ষ্য করেছি।”
স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষক শিক্ষিকার ঘাটতি তেমন ছিল না। এরপর ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে একজন শিক্ষক বদলি হয়ে চলে যান। তারপর ২০২২ সালের মার্চ মাসে আরও একজন বদলি হয়ে যান। তারপর থেকেই এই অবস্থা চলছে। মণিশঙ্কর নস্কর বলেন, “আমাদের স্কুলে চারজন শিক্ষক শিক্ষিকার জন্য আবেদন করা আছে। এখনই অন্তত দুজনকে প্রয়োজন। সেটা কর্তৃপক্ষের কাছে আগেই জানানো হয়েছে।” কেতুগ্রাম ২ ব্লকের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক কুন্তল দত্ত বলেন, “নতুনগ্রাম জুনিয়র হাইস্কুলে আরও দুজন শিক্ষকের অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। তাঁরা যোগ দেবেন।”