• কুরুচিকর মন্তব্য, নারায়ণ গোস্বামীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপের নির্দেশ
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৩ জানুয়ারি ২০২৫
  • দলীয় শাস্তির খাড়া নেমে আসতে চলেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামীর বিরুদ্ধে। অশোকনগরের এই বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি একটি জলসার মঞ্চে উঠে মহিলাদের প্রতি অশ্লীল আচরণ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলাজুড়ে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে। দলের ভিতরে তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা-নেত্রীরা সুর চড়িয়েছেন বলে সূত্রের খবর। আর এই বিষয়টি দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছতেই তিনি জেলা নেতৃত্বকে পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন।

    বুধবার বিকেলে দলের রাজ্য সহ সভাপতি জয় প্রকাশ মজুমদার একটি সাংবাদিক বৈঠকে একথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নারায়ণ গোস্বামীর আচরণ দলের ভাবমূর্তির সঙ্গে খাপ খায় না। জেলা নেতৃত্বকে ওর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’

    জয়প্রকাশ আরও বলেন, বলেন, ‘এটি আগেও বলা হয়েছে। সকলের এ বিষয়ে সজাগ থাকার কথা। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিপূর্বে এটি বার বার বলেছেন। রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীও এ বিষয়ে বেশ কয়েক জন নেতা-নেত্রীকে সময়ে সময়ে সাবধানও করেছেন। দলের শৃঙ্খলা এবং অনুশাসন বিশেষ ভাবে সকলকে মেনে চলতে হবে— এই নির্দেশও বার বার দেওয়া হয়েছে।’

    জানা গিয়েছে, তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী তাঁর বিধানসভা এলাকা অশোকনগরের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁকে ওই অনুষ্ঠানের মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করতে দেখা যায়। সে দিন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত সঙ্গীতশিল্পী মঞ্চে ওঠার আগে বিধায়ক সঙ্গীত পরিবেশন করতে শুরু করেন। সেখানে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মঞ্চে ওঠেন এবং অশ্লীল আচরণ করেন। এমনকি প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে দুই মহিলাকে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁর সেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে (যদিও সেই ভিডিও-র সত্যতা যাচাই করেনি দৈনিক স্টেটসম্যান)।

    এরপরই বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রবল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও তাঁকে নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তৃণমূলের একজন বিধায়ক তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতির এই আচরণে দলের ভাবমূর্তি যথেষ্ট ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে দাবি করেছে তৃণমূলের একাংশ।

    সূত্রের খবর ওইদিন নারায়ণ গোস্বামী অসংলগ্ন অবস্থায় জলসার মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন। বিষয়টি জানতে পেরে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

    সম্প্রতি তৃণমূল দলে একটি শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এবং দলের নেতা, কর্মী, বিধায়ক এবং সাংসদদের নির্দেশ দেওয়া হয়, প্রত্যেককে দলের শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। লঙ্ঘন করলে কড়া শাস্তির মুখে পড়তে হবে। দলের তরফে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় এমন কোনও কাজ করলে প্রথমে তিনবার সাসপেন্ড করা হবে। তারপরেও না শুধরালে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। এরপরই একের পর এক দলীয় নেতা ও নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়। তবে নারায়ণ গোস্বামীর বিরুদ্ধে ঠিক কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে বিষয়ে এখনও জানানো হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জয়প্রকাশ মজুমদার।

    প্রসঙ্গত উত্তর ২৪ পরগনার রাজনীতিতে নারায়ণ গোস্বামীকে নিয়ে বিতর্ক কম নয়। অতীতে তিনি প্রকাশ্য সভায় এমন সব মন্তব্য করেছেন, যা নিয়ে রাজনৈতিক জলঘোলা হয়েছে। এর আগে হাড়োয়ার উপনির্বাচনে তিনি বলেছিলেন, ‘যত ভোট, তত উন্নয়ন!’ অর্থাৎ যে অঞ্চলে তৃণমূল প্রার্থী যত বেশি লিড পাবে, সেই অঞ্চলে তত বেশি উন্নয়ন হবে। তিনি একটি সভায় বলেন, ‘তৃণমূলের কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছেন দলেরই কর্মীরা’। যা নিয়ে দলের ভিতরে ও বাইরে যথেষ্ট রাজনৈতিক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

    দলের প্রথম আমলের তৃণমূল নেতা নারায়ণ গোস্বামী একাধিকবার তাঁর বক্তব্যে মমতাকে সমর্থন জানিয়েও অভিষেককে প্রাধান্য দিয়েছেন। যা নিয়ে দলের নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব বারবার উস্কে দিয়েছে। এরকম একটি সভায় উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পরিষদের সভাধিপতি বলেন, ‘আফটার মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় এই তৃণমূল কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।’ এছাড়া কয়েকমাস আগে নারায়ণ দাবি করেন, ‘আর একমাস, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দায়িত্ব নিয়েছেন, বহু হনুমানের লেজ কাটা যাবে।’ তাঁর এই মন্তব্য দলের সুপ্রিমো মমতার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)