জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: আচমকাই মন্ত্রী মলয় ঘটকের আসানসোলের আপনার গার্ডেনের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর। মন্ত্রীর বাড়িতে অফিসের টেবিলের কাচ ভেঙে ফেলা হয়। এই ঘটনার পরেই ঘটনাস্থলে আসে আসানসোল দক্ষিণ থানার বিশাল পুলিস বাহিনী। সেখানে পৌঁছন আসানসোল দুর্গাপুর পুলিস কমিশনারেটের ডিসি সেন্ট্রাল ধ্রুব দাস, এসিপি সেন্ট্রাল বিশ্বজিত নস্কর।ইতিমধ্যেই এক অভিযুক্তকে আটক করেছে পুলিস।
বুধবার দুপুরে এক যুবক মন্ত্রীর আসানসোলের আপনার গার্ডেনের বাড়ির সামনে পৌঁছয়। মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চায় সে। তবে সাক্ষাতের জন্য আগাম সময় চেয়ে রাখা ছিল না যুবকের। সে কারণে নিরাপত্তারক্ষী তাকে বাধা দেয়। অভিযোগ তার কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা ইট নিয়ে মন্ত্রীর অফিসের মধ্যে ঢুকে যায় সে। ওই বাড়ির একতলায় মন্ত্রীর দফতর।
ওই যুবকের দাবি, তাকে কেউ পাঠায়নি। মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ না পাওয়ার পর এই কাজ করেছে সে। পুলিসি নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও কেন এমন হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মলয় ঘটকের স্ত্রী শিখা ঘটক বলেন, 'আমি ঠিক বলতে পারব না কী করে কী হল। আমরা ওপরে ছিলাম। দেখি দুম দুম করে খুব জোড়ে আওয়াজ হচ্ছিল। আমি ভাবলাম পুলিস বা কেউ হয়তো পড়ে গেছেন। আমি আমার বোন দৌড়ে নিচে এসে দেখি, পুরো ভাঙচুর।' তবে আইনমন্ত্রীর কোনও আঘাত লাগেনি।
বুধবার বিকেলে মন্ত্রী মলয় ঘটকের বাড়িতে দুষ্কৃতী হানা। বাড়ির মধ্যেই মন্ত্রীর দফতর। বিকেল ৫ টা নাগাদ এক যুবক দফতরে ঢোকে। হাতে ছিল বড় থান ইট। ওই ইট মন্ত্রীর টেবিলে আছরে ছুঁড়ে মারে সে। যদিও মন্ত্রী আসানসোলে নেই। তিনি কলকাতায়। এই দফতরের দরজা দিয়েই মন্ত্রীর বাড়ির ওপরে সহজে ওঠা যায়। ঘটনায় আতঙ্কিত মন্ত্রীর পরিবার। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মন্ত্রীর স্ত্রী সুদেষ্ণা ঘটক। আসানসোলে আপনার গার্ডেনে মন্ত্রী মলয় ঘটকের বাসভবনে ভাঙচুরে ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ মন্ত্রী মলয় ঘটকের বাড়িতে ৫ পুলিস কর্মী সর্বদা মোতায়েন থাকে। এক অফিসার ও চার কনস্টেবল। রয়েছে সিসি ক্যামেরা তারপরেও ওই যুবক হাতে ইট নিয়ে ঢুকে পড়ে।
এই ঘটনায় অভিযুক্তকে ইতোমধ্যেই আটক করে পুলিস। ঘটনাস্থলে আসে আসানসোল দক্ষিণ থানার বিশাল পুলিস বাহিনী। আসেন আসানসোল দুর্গাপুর পুলিস কমিশনারেটের ডিসি সেন্ট্রাল ধ্রুব দাস, এসিপি সেন্ট্রাল বিশ্বজিত নস্কর। পরে মন্ত্রীর বাড়িতে আসেন তার ভাই আসানসোল পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র অভিজিৎ ঘটক। আসেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও কর্মীরা।
ঘটনা নিয়ে মন্ত্রী পত্নী সুদেষ্ণা ঘটক বলেন, 'আমি তখন দিদিকে ( পুর কাউন্সিলার সোনা গুপ্তা) সঙ্গে বাড়ির উপরের ঘরে ছিলাম। হঠাৎ করে নিচের অফিস ঘরের মধ্যে কিছু পড়ার মতো শব্দ পাই। প্রথমে ভাবি নিচে তো পুলিস আছে। তারা কেউ পড়ে গিয়েছে। পরে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে নিচে নেমে আসি ও দেখি টেবিলের কাঁচ ভেঙে পড়ে আছে। বাইরে এক যুবককে সবাই ধরে রেখেছে। তার হাতে একটা বড় ইট। জানতে পারি ঐ যুবক ঐ ইট দিয়ে হামলা করেছে। তিনি আরও বলেন, খুবই ভয় পেয়েছি। আমি তো একাই থাকি। বুঝতে পারছি না।' এই ঘটনায় কি তিনি আতঙ্কিত ও নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন? উত্তরে তিনি বলেন, 'অবশ্যই। মন্ত্রী তো বাড়িতে নেই। থাকলে কি হতো জানিনা।'
মন্ত্রীর বাসভবনে পুলিসি নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও কিভাবে হামলা প্রশ্ন উঠছে। ডিসি জানান ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে পুলিস ধৃতের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
অন্যদিকে ডিসিপি (সেন্ট্রাল) বলেন, বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ এক যুবক মন্ত্রীর বাড়িতে অফিস ঘরে ঢুকে ইট দিয়ে হামলা করেছে। তাকে আটক করা হয়েছে। নাম পরিচয় জানা গিয়েছে। কি কারণে সে এমন ঘটনা ঘটালো, তা তাকে জেরা করে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিস মোতায়েন থাকা সত্বেও মন্ত্রীর বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে ? এই প্রসঙ্গে ডিসিপি (সেন্ট্রাল) বলেন, ওই পুলিস কর্মীদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে মন্ত্রীর বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হবে। জানা গিয়েছে, আটক হওয়া যুবক ন্যাড়া মাথা ছিল।
সূত্রে জানা গেছে, ধৃতের নাম ভিক্কি ক্যাওরা। আসানসোল পুরনিগমের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কুমারপুরের কাছে কালিকাপুরের সায়েরপাড়ার বাসিন্দা বছর ২১ র ভিক্কি কেওড়াকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। ঠিক কি কারণে এই যুবক মন্ত্রীর বাড়ির ঢুকে হামলা চালানো তা পুলিশ তাকে জেরা করে জানার চেষ্টা করছে। বাড়িতে হামলার ঘটনা কলকাতায় থাকা মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
সুদেষ্ণা ঘটকের বোন কাউন্সিলর সোনা গুপ্তা পুলিসকে জানান, তিনি নিজে ওই যুবককে জিজ্ঞেস করেছেন। প্রশ্ন করেছেন কেন হামলা চালালো সে? ওই যুবক জানায় সার্টিফিকেট পায়নি বলে হামলা চালিয়েছে সে। প্রত্যক্ষদর্শীরাও পুলিসকে জানায় ওই যুবক সার্টিফিকেট নিয়ে কিছু বলছিল, বোঝা যাচ্ছিল না। একাংশ দাবি করেন ভিক্কি নামে ওই যুবক বাবা মারা যাওয়ার পর কয়েকমাস ধরে ডেথ সার্টিফিকেট পায়নি। মন্ত্রীর কাছে গেলে সমস্যা মিটবে এই আশায় গিয়েছিলেন। কিন্তু মন্ত্রীকে না পেয়ে নিজের ক্ষোভ ব্যক্ত করে দফতরের হামলা চালায়। যদিও পুলিস বিষয়টি হালকা ভাবে নিচ্ছে না। ওই যুবকের নিয়ে পূর্ণ খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেছে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিস। ঘটনার নেপথ্যে কী কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনার পর মন্ত্রীর বাড়িতে পুলিসি নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে।