নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে ভারতমাতাকে মুক্ত করার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। নেতাজি আবেগে ভাসছে গোটা দেশ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছেন তিনি। এসেছিলেন বর্ধমান শহরেও। এই শহরে নেতাজি অনুগামীর সংখ্যা কম ছিল না। বিসি রোড ধরে তিনি সেবার পদযাত্রা করেছিলেন। তাতে অন্যান্যদের মতো শামিল হয়েছিলেন তাঁর অনুগামী গোবিন্দচন্দ্র নাগ। তিনি ছিলেন মিষ্টি ব্যবসায়ী। প্রিয় নেতার নামেই দোকানের নাম রেখেছিলেন নেতাজি মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। গোবিন্দবাবুর অনুরোধে তিনি সেই দোকানেও গিয়েছিলেন। তাতে ওই মিষ্টি ব্যবসায়ী যেন আরও আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলেন। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত ওই দোকানে পালিত হয় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন। পথচলতি লোকজনকে মিষ্টি বিলি করা হয়। আগে এখানে নেতাজির জন্মদিন আরও ধুমধাম করে পালিত হতো। নহবত বসতো। এখন অনুষ্ঠানের জাঁকজমক কমলেও আন্তরিকতার অভাব নেই।
দোকানের কর্ণধার সৌমেন দাস বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মিষ্টি বিতরণ করা হবে। এই দিনটির গুরুত্ব আমাদের কাছে অন্যরকম। সেই সময় বিসি রোড ধরে নেতাজির যাওয়ার ছবি এখনও ফ্রেমবন্দি হয়ে রয়েছে। দাদু নেতাজি অনুগামী ছিলেন। তাঁর কাছে দেশনায়কের অনেক কথা শুনেছি।
ইতিহাসবিদরা বলেন, বর্ধমান জেলায় নেতাজি একাধিকবার এসেছিলেন। কালনায় তিনি বৈঠকও করেছিলেন। বর্ধমান শহরেও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। সেই কারণে জেলার বাসিন্দাদের কাছে এই দিনটির গুরুত্ব অনেক বেশি। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েশা রানি এ বলেন, এই জেলায় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস অনেক বড়। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতো দেশনায়ক এখানে একাধিকবার এসেছিলেন। এটা সত্যিই গর্বের।
শহরের বাসিন্দারা বলেন, বর্ধমান জেলায় ভগৎ সিং এসেছিলেন। বটুকেশ্বর দত্ত, রাসবিহারী বসু, রাসবিহারী ঘোষদের জন্মস্থান এই জেলা। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের পাতায় বর্ধমান জেলার নাম স্বর্ণক্ষরে লেখা রয়েছে। জেলার বাসিন্দাদের কাছে তা গর্বের। আজ, রাজ্যজুড়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন পালন করা হবে। প্রশাসনের উদ্যোগেও বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিসি রোডের সেই মিষ্টির দোকানে নেতাজির জন্মদিন পালন হবে একটু অন্য রকমভাবে। ঐতিহ্য বজায় রেখে বিভিন্ন স্বাদের মিষ্টি বিতরণ করা হবে। পথচলতি লোকজনও মিষ্টি মুখে দেওয়ার আগে স্মরণ করবেন দেশের বীর নায়ককে। এলাকার বাসিন্দারা বলেন, দেশনায়কের স্মৃতিতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেই নেতাজির নামে মিষ্টির দোকান গড়ে উঠেছে। তাঁর পদধূলিতে ধন্য হয়েছে, এমন দোকান খুঁজে পাওয়া কঠিন। সেই কারণে ২৩জানুয়ারির কথা ভোলেন না ওই মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। বংশপরম্পরায় তাঁরা পালন করে আসছেন সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন।-নিজস্ব চিত্র