রামপুরহাটে প্রাথমিক স্কুলের কক্ষ ধার করে চলছে জুনিয়র হাইস্কুল, এক যুগ পেরিয়ে গেলেও জোটেনি নিজস্ব ভবন
বর্তমান | ২৩ জানুয়ারি ২০২৫
বলরাম দত্তবণিক, রামপুরহাট: ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও রামপুরহাট শহর লাগোয়া দিঘিরপাড় জুনিয়র হাইস্কুলে জোটেনি নিজস্ব ভবন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভিতরেই চলছে জুনিয়র হাইস্কুল। তাও আবার একটি কক্ষে একসঙ্গে চালাতে হচ্ছে চারটি শ্রেণির ক্লাস। ওই কক্ষেই আলমারি দিয়ে ঘিরে চলছে অফিস রুম। স্কুলের পরিকাঠামো ও পরিবেশ না থাকায় ছেলেমেয়েদের ভর্তিতেও অনীহা দেখা দিচ্ছে অভিভাবকদের মধ্যে।
২০১০ সালে রামপুরহাট-১ ব্লকের দিঘিরপাড় জুনিয়র হাইস্কুলটির অনুমোদন মেলে। কিন্তু সেই সময় নিজস্ব বিল্ডিং না থাকায় দিঘিরপাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ ধার করে নিয়ে পথ চলা শুরু করে জুনিয়র হাইস্কুল। পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি দ্বিতল হলেও জুনিয়র হাইস্কুলটি আজও একটি কক্ষে চলছে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পাঠদান।
প্রাইমারি স্কুলের ছ’টি কক্ষে চলছে প্রি-প্রাইমারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। প্রাইমারি স্কুল পাশ করার পর অনেক অভিভাবক এই জুনিয়র হাইস্কুলের নিজস্ব ভবন ও পড়াশোনার পরিবেশ না থাকায় ছেলেমেয়েদের ভর্তি করাতে চান না। জুনিয়র হাইস্কুলের নামটাও কোথাও লেখা নেই।
মঙ্গলবার সেই স্কুলে গিয়ে জুনিয়র হাইস্কুলের কক্ষে গিয়ে দেখা যায় ষষ্ঠ শ্রেণির মাত্র দু’জন ছাত্র উপস্থিত। অথচ খাতায় কলমে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি মিলিয়ে ৪০ জন পডুয়া ও তিনজন শিক্ষক, এক অশিক্ষক কর্মী রয়েছে। অন্যদিকে গমগম করছে প্রাইমারি স্কুলটি। এই স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা ১১৪ জন।
জুনিয়র হাইস্কুলের টিআইসি শুভেন্দু বাগদি বলেন, নিজস্ব বিল্ডিং না থাকায় খুবই সমস্যা। প্রাইমারিতে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করার পর কেউই এই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে চায় না। বহুবার প্রশাসন, শিক্ষাদপ্তরকে জানানো হলেও আজও নিজস্ব ভবন মেলেনি। রাজনৈতিক নেতাদের কাছেও গিয়েছি। একটি কক্ষেই অফিস, ক্লাস রুম। সেখানে কী পড়াশোনা হয়! তাই ফিবছর পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে। যারা রয়েছে তারাও টিসি চাইছে।
স্কুলের সহ শিক্ষিকা সুব্রতা মুখোপাধ্যায় আক্ষেপ করে বলেন, আমরা চাই স্কুলের একটি বিল্ডিং হোক। ভবন না থাকায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। বেঞ্চে বসে থাকা দুই পড়ুয়াও মৃদুস্বরে বলে, আমাদের নিজেদের স্কুলঘর হবে না স্যার!
প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত চক্রবর্তী বলেন, জুনিয়র হাইস্কুলের পৃথক ক্যাম্পাস থাকলে ছাত্র সংখ্যা বাড়বে। একটা স্কুলের জন্য দরকার পঠনপাঠনের পরিবেশ, সেটাই তো ওখানে পাচ্ছে না। দুই স্কুল কর্তৃপক্ষই জানালেন, প্রাইমারি স্কুলের মিড-ডে মিলের ভবনেই দু’টি স্কুলের পৃথক রান্না হয়। একটাই সংযোগ, তাই ইলেকট্রিক বিলও ভাগ করে মেটানো হয়। এব্যাপারে সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক গোলাম কিবরিয়া বলেন, সেই সময় প্রাথমিক স্কুলের কাছাকাছি জুনিয়র হাইস্কুল অনুমোদন পেয়েছিল। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রামপুরহাটের মহকুমা শাসক সৌরভ পাণ্ডে বলেন, নিশ্চয়ই কোনও সমস্যার জন্য বিল্ডিং হয়নি। সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক যদি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যার কথা জানান সেক্ষেত্রে পদক্ষেপ করা হবে। (দিঘিরপাড় প্রাথমিক স্কুল। -নিজস্ব চিত্র)