ভগবানপুর-২ ব্লকের শিমুলিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রত্যন্ত এলাকায় কর্মজীবন কাটিয়ে অবসরের মুখে একমাত্র চিকিৎসক
বর্তমান | ২৩ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: কর্মজীবনের শুরু থেকে শেষ একই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই কাটানোর পথে ভগবানপুর-২ ব্লকের শিমুলিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র চিকিৎসক জ্যোতির্ময় সাহা। ১৯৮৮ সালে জুন মাসে ওই চিকিৎসক প্রত্যন্ত বরোজ গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই প্রাইমারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগ দেন। তারপর ৩৭বছর কেটে গিয়েছে। ২০২৬সালে জানুয়ারি মাসে তিনি অবসর নেবেন। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখনও রোগী দেখে চলছেন ৬৫বছর বয়সি চিকিৎসক। প্রত্যন্ত এবং রাজনৈতিক দিক থেকে উত্তেজনাপ্রবণ ওই এলাকায় চিকিৎসক কিংবা নার্সদের বদলি হলেও তাঁরা হাঁপিয়ে ওঠেন। অন্যত্র বদলির জন্য বিএমওএইচ থেকে সিএমওএইচ অফিসে দৌড়ঝাঁপ করেন। ঠিক উল্টো স্রোতে হেঁটে ওই চিকিৎসক নিজের গোটা কর্মজীবন প্রত্যন্ত ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাটিয়ে অবসরের মুখে।
ভবানপুর-২ব্লকের বরোজ গ্রাম পঞ্চায়েত রাজনৈতিক দিক থেকে উত্তেজনাপ্রবণ। তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে প্রায়ই সংবাদ শিরোনামে থাকে। সেই বরোজ এলাকার মানুষদের চিকিৎসার প্রাথমিক ভরসা শিমুলিয়া প্রাইমারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এখানে ইনডোর পরিষেবা চালু আছে। মোট ১০টি বেড রয়েছে। অথচ এই মুহূর্তে কোনও নার্স নেই। রামনগর এবং মুগবেড়িয়া থেকে দু’জন নার্সকে ডেপুটেশনে এখানে আনা হয়। এখন দু’জনেই মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। একমাত্র গ্রুপ-ডি কর্মীও মুগবেড়িয়া থেকে ডেপুটেশনে এখানে আছেন। অন্য কোনও কর্মী নেই। শুধুমাত্র চিকিৎসক জ্যোতির্ময় সাহা থাকেন। মাঝেমধ্যেই ডেলিভারি পেশেন্ট আসেন। তখন চিকিৎসক ও নার্স দু’টোরই ভূমিকা পালন করতে হয় ওই চিকিৎসককে।
গত এক দশকে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স আনার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু, প্রত্যন্ত এলাকায় তাঁরা হাঁপিয়ে উঠেছেন। নানাভাবে সুপারিশ করে এখান থেকে চলে গিয়েছেন। কর্মস্থল থেকে অন্যত্র পালানোর এই হিড়িকে ব্যতিক্রমী চিকিৎসক জ্যোতির্ময় সাহা। এলাকাকে ভালোবেসে তিনি গোটা কর্মজীবন এখানেই কাটিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। ইনডোর পরিষেবা চালু থাকা ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র চিকিৎসক তিনিই। প্রায়ই পাঁচ-ছ’টি বেডে রোগী থাকে। কোনও নার্স না থাকায় সেই কাজটাও ওই চিকিৎসককেই করতে হয়। নির্দিষ্ট কোনও সময় ধরে ডিউটি নয়, রাত-দিন তিনি পরিষেবা দিয়ে চলছেন। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটাই তাঁর দ্বিতীয় বাড়ি হয়ে উঠেছে। এলাকাবাসীও এমন চিকিৎসক পেয়ে খুশি।
ভগবানপুর-২ব্লকের বিএমওএইচ রবীন্দ্রনাথ জানা বলেন, কর্মজীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাটিয়ে দেওয়ার ঘটনা এককথায় নজিরবিহীন। চিকিৎসক জ্যোতির্ময় সাহা সেই কাজটাই করতে চলেছেন। একবছর বাদেই অবসর নেবেন। শিমুলিয়া পিএইচসি থেকেই তিনি অবসর নিতে চান। প্রত্যন্ত ওই এলাকায় অনেক ডাক্তার, নার্স এসে বদলি নিয়ে চলে গিয়েছেন। অগত্যা অন্য এলাকা থেকে দু’জন নার্সকে আমরা ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডিউটি দিয়েছিলাম। কিন্তু, দু’জনে একসঙ্গে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। জ্যোতির্ময়বাবু বলেন, আজ থেকে ৩৭বছর আগে এখানে কর্মজীবন শুরু হয়েছে। আগামী বছর জানুয়ারি মাসে অবসর নেব। এখন ৬৫বছর বয়স হল। এখানে চিকিৎসক বদলি হয়ে এলে বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেন না। তাঁদের ঘন ঘন চলে যাওয়ায় ২২গজে পিচে একদিকে উইকেটে টিকে থাকার মতো আমি থেকে গিয়েছি। দেখতে দেখতে এভাবে ৩৭টা বছর পেরিয়ে গিয়েছে ভাবতেও অবাক লাগে!