• আবদার শেখ হত্যা মামলা, মাহফুজের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
    বর্তমান | ২৩ জানুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: চার বছর আগে খুন হয়েছিল নাকাশিপাড়া থানার অন্তর্গত দোগাছি পঞ্চায়েতের বাসিন্দা আবদার শেখ (৩৫)। দোগাছি পঞ্চায়েতেরই পদ্মপাড়া গ্রামে খুন হয়েছিল সে। তাকে খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিল স্থানীয় বাসিন্দা মাহফুজ শেখ। সেই সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছিল হালিমা বিবি ও আবু শেখ। কৃষ্ণনগর আদালতে চার বছর ধরে সেই খুনের মামলা চলার পর অবশেষে বুধবার সাজা ঘোষণা হল। 


    সরকার পক্ষের আইনজীবী অর্ণব গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, বিচারক বসন্ত শর্মা ৩০২ ধারায় মাহফুজ শেখকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। পাশাপাশি তাকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। অনাদায়ে আরও ৬ মাস জেল খাটতে হবে। 


    নিহত আবদার শেখ ছিলেন পেশায় মাইক ব্যবসায়ী। ঘটনা সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনটা ছিল ২০২০ সালের অক্টোবর মাসের ৩০ তারিখ। সকাল আটটা নাগাদ মাহফুজ শেখের ভাই আয়ুব শেখের কাছে পাওনাগণ্ডা বুঝে নিতে গিয়েছিল ইবাদুর শেখ নামে এক ব্যক্তি। ইবাদুর, আয়ুবের কাছে শ্রমিকের কাজ করত। কিন্তু আয়ুব শেখ তাকে পাওনা টাকা দিতে অস্বীকার করে। উল্টে ইবাদুর শেখকে মারধর ও গালিগালাজ করে। সেই সঙ্গে তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। সেই সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল মাহফুজ শেখ। আয়ুবের হাতে মারধর ও গলা ধাক্কা খেয়ে ইবাদুর তাঁর আত্মীয় আবদার শেখ ও অন্য লোকজনকে নিয়ে মাহফুজের বাড়ি যায়। দু’ পক্ষই একে অপরের উপর চড়াও হয়। তাদের মধ্যে ব্যাপক মারপিট হয়। আগে থেকেই মাহফুজ শেখের কাছে ধারালো অস্ত্র ছিল। যাতে কেউ বুঝতে না পারে, তারজন্য ফুলহাত জামার আস্তিনের ভিতরে ধারালো অস্ত্রটি লুকিয়ে রেখেছিল মাহফুজ। সুযোগ বুঝে আবদারের পেটে ধারালো অস্ত্রটি ঢুকিয়ে দেয় সে। রক্তাক্ত অবস্থায় ঘটনা স্থলেই লুটিয়ে পড়ে আবদার। দিনে দুপুরে এরকম রক্তারক্তি কাণ্ডে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। রক্তাক্ত আবদারকে তাঁর পরিবারের লোকরাই বেথুয়াডহরি হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু ক্রমশ আবদারের অবস্থার অবনতি হতে থাকায় তাকে শক্তিনগর জেল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু বেথুয়াডহরি থেকে শক্তিনগরে নিয়ে যাওয়ার পথেই আবদার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। পরে আবদারের পরিবারের তরফ থেকে নাকাশিপাড়া থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। হালিমা বিবি, আবু শেখ ও মাহফুজ শেখ এই তিনজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছিল। সেইমতো তদন্ত শুরু করে পুলিস। প্রথমেই মাহফুজ শেখ, হালিমা বিবি ও আবু শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়। তথ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করে কৃষ্ণনগর আদালতে মামলার শুনানি শুরু হয়। কিন্তু শুনানি পর্বে হালিমা বিবি ও আবু শেখের বিরুদ্ধে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি। যার জন্য তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।‌ কিন্তু মাহফুজ শেখের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়। ফলে খুনের দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। 


    শেষমেশ বিচারক মাহফুজকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। যদিও পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত আবদার শেখের বিরুদ্ধেও খুন ও অপহরণের একাধিক মামলা ছিল। জামিনে মুক্তি পেয়ে বাড়িতে ছিল সে। তারই মধ্যে এই খুনের ঘটনা ঘটে। 


    (সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মাহফুজ শেখকে। -নিজস্ব চিত্র)
  • Link to this news (বর্তমান)