নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: মঙ্গলবার সালানপুর থানার ডামালিয়ায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরও এলাকা থমথমে। বুধবার পুরো এলাকা বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। এদিন সেখানে তদন্ত করতে আসেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ অনিমেষ ভট্টাচার্য। ঘটনাস্থল থেকেই তিনি মৃতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এদিন প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীর নেতৃত্বে সিপিএম নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিপূরণের দাবি জানান।
মঙ্গলবার জামালিয়াতেই পিএইচইর পাইপলাইন পাতার কাজ করতে গিয়ে মাটি চাপা পড়ে তিনজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন একজন। মৃতদের মধ্যে দু’জন ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীর শ্রমিকের বাড়ি ঝাড়খণ্ডে। দেখা যাচ্ছে এখানে যাঁরা কাজ করছিলেন তাঁদের বেশিরভাগের বাড়ি ঝাড়খণ্ডে। যা নিয়ে নতুন বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন কর্মশ্রী প্রকল্পে ১০০ দিনের জবকার্ডধারীদের সরকারি প্রকল্পে কাজ দিতে হবে। আদতে তা যে হচ্ছে তা স্পষ্ট।
জেলাশাসক পোন্নমবলম এস বলেন, প্রতিটি দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কর্মশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে জবকার্ডধারীদের নিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে কেন স্থানীয়দের কাজের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রাথমিকভাবে ঠিকাদার সংস্থা জানিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের স্কিলড লেবার হিসাবে তাঁদের আনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার দুপুরে প্রায় ২০ ফুট গভীরে পাইপ লাইন পাতার সময় মাটি ধসে পড়ে। মাটি চাপা পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। একজনকে ভর্তি করে নেওয়া হয়। কিন্তু ওখানে কাজ করা শ্রমিকদের বাসস্থান নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। ১০০ দিনের কাজ বাংলায় বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই অবস্থায় রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে জবকার্ড হোল্ডারদের যুক্ত করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। বিভিন্ন দপ্তর সেই নির্দেশ মেনে চলছে। কিন্তু, পিএইচই তা পালন করছে না এই ঘটনায় তা স্পষ্ট।
কারণ এখানে কর্মরত বেশিরভাগ শ্রমিকের বাড়ি ঝাড়খণ্ডে। জানা গিয়েছে, কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার সংস্থা স্থানীয়দের কাজে না নিয়ে সস্তায় ঝাড়খণ্ড থেকে শ্রমিক এনে কাজ করাচ্ছে।
এর আগেও পিএইচইর একাধিক কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পশ্চিম বর্ধমান জেলার একাধিক জল প্রকল্পের কাজে টালবাহানা করা। রহস্যজনকভাবে পাইপ চুরি হওয়া। পরে ওই পাইপই ফেরত আসা। এবার সরকারি প্রকল্পের কাজে স্থানীয়দের না নিয়ে ঝাড়খণ্ডের শ্রমিকদের কাজে লাগানোয় শিল্পাঞ্চলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এদিনই হাসপাতালে গিয়ে মৃতের পরিবারদের সঙ্গে দেখা করেন পিএইচই দপ্তরের আধিকারিকরা। জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে মৃতদের পরিবারকে চার লক্ষ টাকা ও জখমের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। এবিষয়ে সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, আমাদের দাবি মেনে পিএইচই দপ্তর হাসপাতালেই চার লক্ষ টাকা তৎক্ষণাৎ ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছে।