নিজস্ব প্রতিনিধি, আলিপুরদুয়ার: ‘অরণ্য, জঙ্গল, সবুজে অধিকার আছে জনগণেরও।’ বুধবার আলিপুরদুয়ার জেলার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে এই বক্তব্য করার পাশাপাশি রাজ্যের বনাঞ্চল এলাকায় পর্যটকদের থেকে আকাশছোঁয়া ফি নেওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এখানেই শেষ নয়, পর্যটকদের স্বার্থে এই ধরনের সমস্ত ফি মকুবের ঘোষণাও করেন তিনি।
রাজাভাতখাওয়ায় গাড়ি নিয়ে ঢুকতে পর্যটকদের থেকে ২৫০০ টাকা নেওয়া হয়। এমনকী স্কুল পড়ুয়াদেরও রেয়াত করা হয় না। আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলালের এই অভিযোগ শুনেই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, কেন পর্যটকদের ঢুকতে টাকা নেওয়া হবে? হোয়াই? কার অনুমতিতে এটা করা হচ্ছে? এই প্রশ্নের জবাবে জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে উপস্থিত সংশ্লিষ্ট আধিকারিক জানান, চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেনের ঠিক করে দেওয়া রেটেই এই ফি নেওয়া হয়। এই উত্তর শুনেই মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্ন, সরকারকে না জানিয়েই এসব হবে? জমিদারি নাকি? গায়ের জোর? বন দপ্তর কি সরকারের বাইরে? একই সঙ্গে তাঁর সিদ্ধান্ত, অবিলম্বে এটা পরিবর্তন করে দেওয়া হবে। পর্যটকদের জন্য কোনও ফি লাগু থাকবে না। এর জন্য প্রয়োজনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলেও তিনি জানান। এই প্রসঙ্গেই বন দপ্তর নিজের মর্জি মতো কাজ করছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। যার জেরে সাধারণ মানুষের কাছেও সরকারের ভাবমূর্তি ধাক্কা খাচ্ছে বলেও তাঁর মত। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, আধিকারিকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তাঁদের অসুবিধা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ সেটা বুঝবেন না। তাঁরা সরকারকেই দোষারোপ করবেন। তিনি বলেন, অন্যান্য রাজ্যের মতো বাংলায় যেখানে জলের জন্য কর নেওয়া হয় না, সেখানে পর্যটকদের থেকে এত টাকা নেওয়া হচ্ছে কেন? এতে পর্যটন শিল্প তো মার খাচ্ছে!
এছাড়াও, বনাঞ্চলে আকাশচুম্বী বাড়ি তৈরি হওয়া নিয়েও ক্ষোভ উগরে দেন মমতা। তিনি বলেন, আমি লাটাগুড়ি গিয়ে দেখে এসেছি জঙ্গল ঘিরে বিরাট বিরাট বাড়ি হচ্ছে। জেলা পরিষদের এই সব অনুমতি না দেওয়া উচিত। জঙ্গল ঢেকে চার-পাঁচতলা বাড়ি হয়ে গেল। এগুলো চলবে না। মনে রাখবেন আপনাদের ওপর নজর থাকবে। কোথায় কোথায় এই বেআইনি কাজ হচ্ছে, তা জেলা পরিষদ দেখে জেলা শাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে রিপোর্ট দেবেন। পঞ্চায়েতেরও উচিত দেখে শুনে বাড়ি তৈরির অনুমতি দেওয়া।
হাসিমারায় তাঁর গেস্ট হাউজের দেওয়ালে ‘অনুপ্রবেশকারীদের গুলি করে মারা হবে’ বলে লেখা আছে। এবিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায় এটা অমানবিক। তার জায়গায় ‘আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ লেখা উচিত। যদি বায়ুসেনা এটা কর থাকে, তাহলে তাদের সঙ্গে কথা বলতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশও দেন তিনি। হাতির সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি কেন্দ্রকে জানানো হয়েছে বলেও তিনি জানান। এছাড়াও, হোমস্টে সংক্রান্ত আইনি জটিলতার দ্রুত নিষ্পত্তি এবং জয়ন্তীতে ডোলোমাইট উত্তলনের বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখার নির্দেশ দেন তিনি।