• পথ প্রদর্শক
    বর্তমান | ২৩ জানুয়ারি ২০২৫
  • প্রবীর ঘোষাল: ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর মাস। অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের রাজনীতির দিকে তখন গোটা দেশের নজর। শ্বশুরমশাইয়ের সঙ্গে জামাইবাবাজির কড়া টক্কর। লক্ষ্মীপার্বতীর মতো নিজের অর্ধেকেরও কমবয়সি মহিলাকে অর্ধাঙ্গিনী করে ভোট যুদ্ধে বাজি জিতেছেন এনটি রামারাও। শ্বশুরমশাইয়ের কাছে মর্যাদার লড়াইয়ে শেষমেশ হার মেনেছেন জামাই চন্দ্রবাবু নাইডু।


    কয়েকদিন ধরেই হায়দরাবাদে রয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ফের শপথ নেবেন রামারাও। সাতসকালে হোটেলের ঘরে ফোন বেজে উঠল। রাজ্যের বাইরে কোনও ইভেন্ট কভার করতে গেলে ‘বর্তমান’ দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক বরুণ সেনগুপ্তের সকালে ফোন আসাটা রুটিন ছিল। 


    সেদিন জানতে চাইলেন, আজ কী কী কাজের প্ল্যান করেছ? জবাবে বললাম, আজ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যাব সেটাই তো মেন ইভেন্ট...। কথা ফুরোবার আগেই বরুণবাবু ধমক দিয়ে বললেন, ‘তোমরা মোটেই রিপোর্টার নও, সব ফালতু। আরে এনটিআরের পরিবার হল নাটকের রঙ্গমঞ্চ। শপথ নিতে যাওয়ার আগে কিছু তো নাটক হবেই। তার ওপর ওঁর স্ত্রী লক্ষ্মীপার্বতী কী করে দেখ। সোজা চলে যাও মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে। সঙ্গে একজন ফোটোগ্রাফারকে রেখ।’


    অটো ধরে সাত-সকালে ছুটলাম হায়দরাবাদের বানজারা হিলসে। আমি আর সঙ্গী তেলুগু দৈনিকের সাংবাদিক ছাড়া এনটিআরের বাড়িতে তখন দু’চারজন নিরাপত্তারক্ষী। হঠাৎ দেখলাম এক মহিলা পিতলের ঘড়ায় করে জল এনে উঠোনে রাখলেন। গোল আকৃতির একটা ছোট আলপনা আঁকলেন। তারপরই লক্ষ্মীপার্বতী ও  পিছনে রামারাওয়ের আগমন। হাঁটু গেড়ে স্বামীর সামনে বসলেন লক্ষ্মীপার্বতী। সাদা ধুতি (লুঙ্গি) আর পাঞ্জাবি পরিহিত প্রত্যাবর্তনের মুখ্যমন্ত্রীকে ঘড়ার জলে পা ধুইয়ে দিতে লাগলেন অর্ধাঙ্গিনী। উপস্থিত একমাত্র চিত্র সাংবাদিক শঙ্করণ ফটাফট ক্যামেরাবন্দি করলেন সেই দৃশ্য। শপথ নিতে বিরাট কনভয় নিয়ে বেরিয়ে গেলেন এনটিআর। এক্সক্লুসিভ ছবির কথা শুনে বরুণদা নির্দেশ দিলেন, ‘আর দেরি কর না। তুমি যত তাড়াতাড়ি পার বিমানের টিকিট কাট, ছবি নিয়ে সোজা অফিসে চলে এসো।’ স্বাভাবিকভাবেই সেই ছবি নিয়ে পরের দিন আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল। সাংবাদিক জীবনে বরুণবাবুর দূরদর্শিতা এবং অনুমান ক্ষমতার এইরকম অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে আমার স্মৃতিতে। 
  • Link to this news (বর্তমান)