নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাঘাযতীনের পর এবার ট্যাংরা! ক্রিস্টোফার রোডে বিপজ্জনকভাবে পরস্পরের দিকে হেলে পড়ল দু’টি বহুতল। একটি বহুতলে বাসিন্দারা থাকেন। পাশেরটির নির্মাণকাজ এখনও চলছে। বুধবার বিষয়টি সামনে আসতেই হইচই পড়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সপ্তাহখানেক আগে থেকেই বিষয়টি তাঁরা খেয়াল করেছিলেন। এলাকায় চাঞ্চল্যের খবর পেয়ে গত সোমবার পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে আসেন পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়াররা। বুধবার চূড়ান্ত পর্যায়ের পরিদর্শন হয়। তার ভিত্তিতে সবুজ রঙের বহুতলটি খালি করে সেটি ভেঙে ফেলার নোটিস দেওয়া হয়েছে। ওই বাড়িতেই বসবাস শুরু হয়েছিল। ইঞ্জিনিয়ারদের পর্যবেক্ষণ, নির্মীয়মাণ বহুতলের তুলনায় সবুজরঙা বাড়িটি বেশি হেলেছে। তাই সেখানকার বাসিন্দাদের তিনদিনের মধ্যে ঘর খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভাঙার কাজ শুরু কররা আগে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেবে পুরসভা। নির্মীয়মাণ অন্য বহুতলটিকে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগে নোটিস দেওয়া হয়েছে। মামলা বিচারাধীন। সবুজ রঙের বহুতলের ১৩টি ফ্ল্যাটে অনেকের বসবাস। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের এখন মাথায় হাত। দু’টি বহুতলের প্রোমোটারই আপাতত বেপাত্তা।
এদিন সকালে ১১/২, ক্রিস্টোফার রোডের দু’টি বহুতল হেলে পড়ার খবর সামনে আসে। ‘পুষ্পাঞ্জলি রেসিডেন্সি’ নামে সবুজ রঙের বিল্ডিংটির সামনের দিকে পাঁচতলা হলেও পিছনের দিকে রয়েছে আরও একটি তল। বাসিন্দাদের দাবি, বেআইনি নির্মাণ হয়নি। তাঁদের কাছে বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। তবে তাঁরা সেরকম কিছু দেখাতে পারেননি। জানা গিয়েছে, বাড়িটি ঠিকা জমির উপর মাথা তুলেছে। পুরসভার অনুমোদন সংক্রান্ত কোনও কাগজপত্র নেই বলেই অভিযোগ। এক পুরকর্তা বলেন, ‘ওই জায়গায় এভাবে ছ’তলা নির্মাণের অনুমোদন পাওয়ার কথাই নয়।’ বুধবার রাতেই পরিস্থিতি দেখতে সেখানে যান মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
সেখানে গিয়ে দেখা গেল, হেলে পড়া দু’টি বহুতল প্রায় গায়ে গায়ে লেগে গিয়েছে। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পাশের বহুতলটির কাজ চলছে। দু’টি বাড়ির মাঝে কমপক্ষে চার ফুটের যে ফাঁক রাখা উচিত, সেসবের কোনও বালাই নেই। হেলে পড়া বহুতলের বাসিন্দা সমর নন্দী, দীপলি বাহাদুর বলেন, ‘বছরখানেক আগে যখন ওই বাড়িটি তৈরির কাজ শুরু হয়, আমরা বারণ করেছিলাম। ওদের ভিত তৈরির সময় থেকেই আমাদের ফ্ল্যাটে সমস্যা দেখা দেয়।’ মীনা সেনগুপ্ত নামে অপর এক বাসিন্দা বলেন, ‘এক সপ্তাহ হল, বিষয়টি বেশি করে চোখে পড়ছে। প্রোমোটার বলেছিল, ভয় নেই। এখন বাড়ি খালি করতে বললে কোথায় যাব!’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্মীয়মাণ বহুতলটি যে জমিতে তৈরি হয়েছে, তার মালিক নরসিংহ সিং এবং ভৈরব সিং নামে দুই ভাই। পাশেই রয়েছে নরসিংহের দোতলা বাড়ি। সেই বাড়ির দেওয়ালকেই বহুতলের একদিকের দেওয়াল করে ফেলা হয়েছে। নরসিংহ সিংহের স্ত্রী রেখা সিং বলেন, ‘এভাবে এক দেওয়ালে দু’টো বাড়ি বানিয়েছে।’