স্বাধীনতার আগে থেকে নেতাজির জন্মদিন পালন করছে মলঙ্গা লেন
বর্তমান | ২৩ জানুয়ারি ২০২৫
অলকাভ নিয়োগী, বিধাননগর: ১৯৪৫ সালের জানুয়ারি মাস। স্বাধীনতার অপেক্ষা করছে গোটা দেশ। মধ্য কলকাতার ৩৮, মলঙ্গা লেনে তখন এক অদ্ভূত ব্যস্ততা! রাস্তার ধারেই ‘জাতীয় আর্ত্তত্রাণ সমিতি’র অফিস। ঠিক তার সামনে আনা হল ভারতমাতার বিশাল মূর্তি। সঙ্গে নেতাজির ছবি। ২৩ জানুয়ারির সকালে তোলা হল আজাদ হিন্দ বাহিনীর পতাকা। ‘বন্দে মাতরম’ স্লোগানের সঙ্গে শঙ্খধ্বনিতে তখন মুখরিত গোটা এলাকা সাড়ম্বরে পালিত হল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন! মনে রাখতে হবে, তখনও ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়নি। স্বয়ং সুভাষচন্দ্র রয়েছেন লড়াইয়ের ময়দানে। সেই থেকেই নেতাজির জন্মদিন পালিত হচ্ছে মলঙ্গা লেনে। উদ্যোক্তা গোপালচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ‘জাতীয় আর্ত্তত্রাণ সমিতি’। সেই থেকে আজও ২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিনে এখানে উত্তোলিত হয় আজাদ হিন্দের পতাকা।
৩৯, মলঙ্গা লেনেই ছিল বিপ্লবী অনুকূল মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি। তিনি ১৯১৪ সালে রডা কোম্পানির অস্ত্র লুটের অন্যতম কাণ্ডারী ছিলেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে মলঙ্গা লেনে অস্ত্র নামানো হয়েছিল। গোপাল মুখোপাধ্যায় ছিলেন বিপ্লবী অনুকুলবাবুরই ভাইপো। একই বাড়িতে থাকতেন তাঁরা। গোপালবাবু ‘জাতীয় আর্ত্তত্রাণ সমিতি’র প্রতিষ্ঠাতা। ৩৮ নম্বর ঠিকানায় এখনও সমিতির অফিস রয়েছে। গোপালবাবুর নাতি তথা নেতাজির জন্মদিন উদযাপনের অন্যতম আয়োজক শান্তনু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘কলকাতার মেয়র থাকাকালীন নেতাজি আমাদের বাড়িতে কয়েকবার এসেছেন অনুকুল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য। দাদু তখন কিশোর। নেতাজির ভাবধারায় উদ্বুব্ধ হয়েই দাদু ১৯৪৫ সালে এই জাতীয় আর্ত্তত্রাণ সমিতি প্রতিষ্ঠা কলেন। এই সমিতির ব্যানারে ’৪৫ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে নেতাজির জন্মদিন পালন করা হচ্ছে। এবার ৮০ বছরে পড়ল।’
তিনি জানান, আগে ভারতমাতার মূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রাও করা হতো। এখন নেতাজির আবক্ষমূর্তি থাকে। ওই মূর্তি গোপালদাদুই বানিয়েছিলেন। মলঙ্গা লেনে নেতাজির জন্মদিন পালনের কথা জানতে পেরেছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরাও। তাঁরা সেই সময় অনুষ্ঠানে আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু সেবার তাঁরা আসতে না পারায় ভারতমাতা ও নেতাজির মূর্তি নিয়ে মলঙ্গা লেন থেকে শোভাযাত্রা পৌঁছে যায় নেতাজির বাসভবন পর্যন্ত।