২০১৬ সালের ৮ এপ্রিল। মাদক মামলায় অভিযুক্ত আনসার রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেয় বারাসত আদালত। কোনও খুনের ঘটনা ঘটেনি। বিচারক তাঁর রায়ে উল্লেখ করেন, ‘এই ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম।’ সে জন্যই মৃত্যুদণ্ড। বিচারকের নাম? অনির্বাণ দাস। তখন তিনি বারাসতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা (৬ নম্বর কোর্ট) বিচারক। এই অনির্বাণ দাসই এখন শিয়ালদহ আদালতের ফার্স্ট এডিজে।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসক–ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া সঞ্জয় রায়কে সোমবার তিনি আজীবন কারাবাসের সাজা দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি মনে করেছেন, ‘এই ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম নয়।’ এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে গিয়েছে রাজ্য সরকার।
প্রায় ৯ বছর আগে মাদক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া এক জনকে বিচারক অনির্বাণ দাস কেন মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন? যদিও ২০১৯ সালে কলকাতা হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ডর পরিবর্তে সেই আনসার রহমানকে ৩০ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
সূত্রের খবর, ২০০২–এর ৩ অক্টোবর মাদক চক্রের পান্ডা আনসার রহমান সল্টলেকে মাদক–সহ গ্রেপ্তার হয় নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর (এনসিবি) হাতে। আনসার ওরফে রমেশ গিরিকে সল্টলেকের বাড়ি থেকে ব্যাগ নিয়ে বেরনোর সময়ে গ্রেপ্তার করে এনসিবি। হেরোইন, নগদ ১৬ হাজার টাকা এবং একটি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়।
ধৃতকে জেরা করে গ্রেপ্তার করা হয় চক্রের আর এক পান্ডা দীপক গিরি ওরফে গঙ্গাপ্রসাদ যাদবকে। সল্টলেকের দু’জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে ৫৩ কেজি ৫০০ গ্রাম হেরোইন বাজেয়াপ্ত করা হয়। ২০১৬–র ৮ এপ্রিল বারাসতের তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (৬ নম্বর কোর্ট) অনিবার্ণ দাস মৃত্যুদণ্ড দেন আনসারকে, দীপককে ৩০ বছরের কারাদণ্ড।
সেই মামলার রায়ের কপিতে বিচারক অনির্বাণ দাস উল্লেখ করেছিলেন— ‘খুনের ক্ষেত্রে দেখা যায় দোষী যে, সে কোনও এক ব্যক্তির জীবন কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু এখানে যে বিপুল পরিমাণ হেরোইন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তা সমাজের বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এই হেরোইনের নেশা বহু পরিবারের সদস্যদের ধ্বংস করেছে। এ ধরনের অপরাধীর নিজের ক্ষেত্রে কিছু যায়–আসে না, কিন্তু এরা সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার জন্য যুদ্ধে সামিল হতেও পিছপা হয় না। এধরনের দোষীরা জাতির শত্রু বা এনিমিজ় অফ দ্য নেশন।’
বিচারক লেখেন, ‘দোষী আনসার আগে মাদক মামলায় দু’বার দোষী সাব্যস্ত হয়েও নিজেকে শোধরায়নি। সে ওই পেশাতেই থেকে গিয়েছে। আনসার সমাজে বেঁচে থাকার অধিকার হারিয়েছে। আনসার সমাজের জন্য হুমকি। তার সংশোধনের কোনও সম্ভবনা নেই— বিয়ন্ড রিফর্ম। আনসার সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছে। সে আগের সাজাকে অগ্রাহ্য করেছে।’