এই সময়: আইভিএফ পদ্ধতিতে মায়ের কোলে এসেছিল শিশু। কিন্তু অল্প বয়সেই রক্তরোগে আক্রান্ত সে শিশুর জন্য জরুরি হয়ে দাঁড়ায় অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন। অভিযোগ, তখনই পরিবারের ডিএনএ প্রোফাইলিং করতে গিয়ে জানা যায়, বাবার শুক্রাণুতে নয়, বরং আইভিএফ সেন্টারের ভুলে অন্য কোনও ব্যক্তির দানের শুক্রাণুর দৌলতে তাকে গর্ভে ধরেছিলেন মা। মায়ের স্টেমসেল ম্যাচ না করায় খোঁজ পড়ে ওই জৈবিক বাবার। কিন্তু তাঁর পরিচয় আর জানা যায়নি।
পরে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের অভাবে মারা যায় বছর চারেকের ওই শিশু। এই ঘটনায় দক্ষিণ কলকাতার ওই আইভিএফ সেন্টারকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে ক্লিনিক্যাল এস্ট্যাবলিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন। বুধবার শুনানির পর কমিশনের চেয়ারম্যান, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথা জানান। তিনি জানান, দুর্ভাগ্যজনক এই ঘটনার শিকার রাহুল ও গুঞ্জন কোঠারি (নাম পরিবর্তিত) নামে দক্ষিণ কলকাতার এক দম্পতি।
তাঁদের সন্তানের জৈবিক পিতার খোঁজ না পেয়ে এবং তার জেরে মর্মান্তিক পরিণতির শিকার হয়ে তাঁরা মামলা করেছিলেন ক্লিনিক্যাল এস্ট্যাবলিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশনে। পার্ক সার্কাসের কাছে সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ের একটি বেসরকারি আইভিএফ ক্লিনিকে তিন বারের চেষ্টায় গুঞ্জনের গর্ভে ভ্রূণ প্রতিস্থাপিত হয়। যথাসময়ে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি।
কিন্তু কিছু দিন পরেই বোঝা যায়, বিরল জন্মগত রক্তরোগের শিকার একরত্তি। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনই একমাত্র উপায়। রাহুলের অভিযোগ, তখনই তাঁরা জানতে পারেন, তাঁদের সন্তানের জন্মের নেপথ্যে রয়েছে দানের শুক্রাণু। কিন্তু জৈবিক বাবার খোঁজ না মেলায় সেই চিকিৎসা অধরা থেকে যায়। মৃত্যু হয় ওই শিশুর। অভিযোগ, শিশুর প্রাণরক্ষার জন্য শুক্রাণু দাতার পরিচয় জানাতে বললেও অভিযুক্ত ওই আইভিএফ সেন্টার তা জানাতে পারেনি।
এ দিন ওই মামলার রায় দিতে গিয়ে কমিশনার চেয়ারম্যান, বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ওই ক্লিনিকটির যুক্তি ছিল, দানের শুক্রাণুতে আইভিএফ হওয়ার কথা দম্পতিকে জানানো হয়েছিল। প্রমাণস্বরূপ তাঁরা গুঞ্জনের সই করা একটি কাগজও দেখায়। কিন্তু কমিশনার চেয়ারম্যান পাল্টা যুক্তি দিয়ে জানান, কেন্দ্রীয় সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তি আইনের গাইডলাইন অনুযায়ী, ওই সই স্বামী ও স্ত্রী, দু’জনকেই করতে হয়। এ ক্ষেত্রে শুধু স্ত্রীর সই রয়েছে। তাই সেটি বৈধ নয়। সে জন্যই ওই ক্লিনিককে মামলাকারীর হাতে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন কমিশনার চেয়ারম্যান।
এ দিকে আর একটি ঘটনাতেও বাইপাস লাগোয়া মুকুন্দপুরের একটি সুপার–স্পেশ্যালিটি হাসপাতালকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করে কমিশন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, সৌমেন কুণ্ডু নামে এক হৃদরোগীর ওপেন হার্ট বাইপাস সার্জারির পর একটুকরো গজ রয়ে গিয়েছিল বুকের ভিতরেই। পরে মারাত্মক যন্ত্রণার কারণে এসএসকেএমে গেলে সেখানেই ওই রোগীর বুক থেকে গজ বের করা হয়।