এই সময়: জানুয়ারিতে পৃথিবীর সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে খুব কাছাকাছি এসেছিল মঙ্গল গ্রহ। তার পরেই মঙ্গলের চলে গিয়েছিল সূর্যের একেবারে বিপরীতে বা ‘প্রতিযোগ’ অবস্থানে। সরাসরি সূর্যের আলো পেয়ে লাল গ্রহের ঔজ্জ্বল্য বেড়ে গিয়েছিল বহুগুণ।
রাতের আকাশ নিয়ে যাঁদের উৎসাহ খুব বেশি, তাঁদের জন্য এ বার জানুয়ারি নতুন চমকের ব্যবস্থা করেছে। এই জানুয়ারিতেই রাতের আকাশে শুরু হয়েছে ‘প্ল্যানেট প্যারেড’। অর্থাৎ একই লাইনে পর পর অবস্থান করতে দেখা যাবে সৌরজগতের ৮টি গ্রহের মধ্যে ছ’টিকেই।
চাঁদের এখন কৃষ্ণপক্ষ। রাতের আকাশে তাই চাঁদের আলোর জোর খুব বেশি নয়। এমনই পরিস্থিতিতে সূর্যাস্তের আধ ঘণ্টা পর থেকেই আকাশে এক এক করে আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করবে গ্রহগুলো। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, পশ্চিম আকাশে সবার আগে ফুটে উঠবে শুক্র।
তার পর এক এক করে পশ্চিম থেকে পূর্ব আকাশে দেখা যাবে শনি, বৃহস্পতি এবং মঙ্গল। শনি ও বৃহস্পতির মাঝে থাকবে ইউরেনাস এবং নেপচুনও। কিন্তু, বহু দূরে থাকার জন্য খালি চোখে এই দুই গ্রহকে দেখা যাবে না। তবে, মাঝারি মাপের টেলিস্কোপ দিয়ে খুব সহজেই রাতের আকাশে চেনা যাবে এই দুই গ্রহকে।
সন্ধের পর আকাশে একের পিছনে জমা হওয়া অন্য গ্রহের এই সারি দেখার জন্য ইতিমধ্যেই কলকাতা শহরে শখের জ্যোতির্বিদদের মধ্যে সাড়া পড়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু জায়গা থেকে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়াদের রাতের আকাশ দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজ়িয়ম–ও (বিআইটিএম)।
এ ছাড়াও নিউ টাউনের ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট–এও পড়ুয়াদের জন্য আকাশ দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিড়লা তারামণ্ডলের বিজ্ঞান আধিকারিক বিপাশ দাশগুপ্ত মহাকাশের এই ‘প্ল্যানেট প্যারেড’ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আকাশে চাঁদ না থাকলে এই ধরনের মহাজাগতিক ঘটনা দেখতে অনেক সুবিধা হয়।’
তিনি বলেন, ‘২১ জানুয়ারি থেকে এই মহাজাগতিক ‘প্রদর্শন’ শুরু হয়েছে। বেশ কিছুদিন এটা দেখা যাবে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ গ্রহদের এই তালিকায় যোগ দেবে বুধও। তখন পৃথিবী থেকে বাকি সাতটি গ্রহকেই দেখা যাবে।’
পশ্চিম থেকে পূর্ব আকাশে পর পর এমন গ্রহের সারি দেখতে পাওয়া নিয়ে শুধু কলকাতা নয়, সারা পৃথিবীতেই রাতের আকাশ নিয়ে উৎসাহীদের মধ্যে সাড়া পড়ে গিয়েছে। একই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে এই ‘প্ল্যানেট প্যারেড’ নিয়ে সম্ভব–অসম্ভব নানা ধরনের তথ্য। তার মধ্যে অন্যতম হলো, ‘প্ল্যানেট প্যারেড মহাজগতের বিরলতম ঘটনাগুলোর একটি।’
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই ঘটনা খুবই আকর্ষক, তবে বিরল নয়। একই সঙ্গে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনিকে খালি চোখে দেখা গেলেও ইউরেনাস এবং নেপচুনকে টেলিস্কোপ ছাড়া কোনও ভাবেই দেখতে পাওয়া যাবে না।