‘মন অন্দরসে কুছ আচ্ছা নেহি লাগ রাহা হ্যায়’,' ‘পঞ্চায়েত’-এর দ্বিতীয় সিজ়নের বহুল চর্চিত সংলাপের কথা মনে আছে? পাকা ঘর তৈরির জন্য টাকা পেতে ছেলের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া। বেশ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছিলেন দর্শকরা। কিন্তু বাস্তবে সেই একই পথ নিয়ে পাকা ঘর পেতে চেয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ধর্মসাগরের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু ছেলের সঙ্গে তাঁর নকল ঝগড়ার নেপথ্যের ঘটনা ফাঁস করেছিল ‘এই সময় অনলাইন’। এরপরেই নড়চড়ে বসে প্রশাসন। অবশেষে আবাস যোজনায় পাওয়া ৬০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন তিনি। প্রশাসনের তরফে জানানো হচ্ছে, যোগ্য কোনও ব্যক্তিকে দেওয়া হবে এই টাকা।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর-১ নম্বর ব্লকের সরবেড়িয়ার ধর্মসাগর গ্রামের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ দাস। তাঁর দোতলা পাকা বাড়ি রয়েছে। কিন্তু তারপরেও আবাস যোজনার বাড়ি প্রাপকদের তালিকায় তাঁর নাম ছিল। রবীন্দ্রনাথ দাবি করেছিলেন, দোতলা বাড়িটি তাঁর ছেলের। পাঁচ বছর ধরে ছেলে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন না। টাকাও দেন না। মাটির এক চিলতে বাড়িতে তিনি এবং তাঁর স্ত্রী থাকেন। তাই তিনি সরকারি এই প্রকল্পের টাকা পাওয়ার যোগ্য।
যদিও প্রতিবেশীরা দাবি করেছিলেন, রবীন্দ্রনাথবাবুর ছেলে অবিবাহিত। সোনার কাজ করেন, বাবা-মাকে নিয়মিত টাকাও পাঠান। ছেলের সঙ্গে ঝগড়ার কাহিনি আসলে নাটক। এ দিকে আবাস যোজনার টাকা পেয়ে তড়িঘড়ি বাড়ির কাজ শুরুও করে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু, ‘এই সময় অনলাইন’-এ তাঁর মিথ্যে দাবির খবর প্রকাশ হওয়ার পরে নড়েচড়ে বসে প্রশাসনও।
গত ১৯ জানুয়ারি দাসপুর-১-এর বিডিও দীপঙ্কর বিশ্বাস বলেছিলেন, ‘সোমবারই (২০ জানুয়ারি) আমি ওই উপভোক্তার বাড়িতে গিয়ে সরজমিনে তদন্ত করব।’ সেই মোতাবেক তিনি রবীন্দ্রনাথের বাড়িতে গিয়েওছিলেন। সঙ্গে গিয়েছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের আধিকারিকরাও। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পান তাঁরা। জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ দাসের জায়গাতেই তাঁর ছেলে দোতলা বাড়ি করেছেন। ছেলের সঙ্গে বাবা-মার সম্পর্কও ভালো। রবীন্দ্রনাথকে সতর্কও করেন প্রশাসনিক কর্তারা।
এরপরেই বুধবার বিডিও অফিসে গিয়ে ৬০ হাজার টাকা ফেরত দেন রবীন্দ্রনাথ। বৃহস্পতিবার বিডিও দীপঙ্কর বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের তিনি টাকা ফেরত দিয়েছেন। ওই অর্থ প্রকৃত উপভোক্তার কাছে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেব উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে।’