• মেডিক্যাল কর্মী নিয়োগে ৮৬ লাখ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ
    এই সময় | ২৩ জানুয়ারি ২০২৫
  • অরূপকুমার পাল, ঝাড়গ্রাম

    ঠিকাদার সংস্থার মাধ্যমে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত টেন্ডারে ৮৬ লাখ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সম্প্রতি। টেন্ডারের জন্য উপযুক্ত নথিপত্র জমা না করা সত্ত্বেও হাসপাতালের অ্যাকাউন্টস অফিসারের ‘ঘনিষ্ঠ’ একটি সংস্থাকে তড়িঘড়ি কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

    ইতিমধ্যে ওই টেন্ডারে অংশ নেওয়া এসবি এন্টারপ্রাইজ় নামে এক ঠিকাদার সংস্থা ওই হাসপাতালের অধ্যক্ষ এবং ঝাড়গ্রামের জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন। কিন্তু অভিযোগের সুরাহা না করেই এসএমএস সিকিউরিটি সার্ভিস এজেন্সি নামে হাসপাতালের অ্যাকাউন্টস অফিসার দেবব্রত পাত্রের ‘ঘনিষ্ঠ’ ওই সংস্থাটিকে কাজের ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

    যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়েছেন, টেন্ডারে কোনও বেআইনি কাজ করা হয়নি। অভিযোগকারী ঠিকাদার সংস্থাটি বুধবার জানিয়েছে, তারা এই বেনিয়মের বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ এবং অভিযোগকারী ঠিকাদার সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের গত ৫ ডিসেম্বর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনলাইনে দু’টি টেন্ডারের বিজ্ঞপ্তি দেন (মেমো নম্বর-JGMCH/2024/P-1279 এবং JGMCH/2024/P-1280)।

    ওই দু’টি টেন্ডারে উল্লেখ করা হয়, ঠিকাদারের মাধ্যমে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে জিডিএ, নিরাপত্তারক্ষী, হাউসকিপিং, সাফাইয়ের জন্য মোট ৬১ জন কর্মী নিয়োগ করা হবে। দুই টেন্ডারের জন্য বরাদ্দ করা হয় মোট ৮৬ লাখ টাকা। কোন কোন ঠিকাদার সংস্থা ওই টেন্ডারের জন্য আবেদন করতে পারবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি এবং কাগজপত্রের কথাও উল্লেখ করা হয় টেন্ডারের বিজ্ঞপ্তিতে।

    তারপর মোট ১৩টি ঠিকাদার সংস্থা অনলাইনে টেন্ডারে অংশ নেয়। এমনিতে প্রতিটি আবেদনকারী ঠিকাদার সংস্থাই অনলাইনে অন্য যে কোনও আবেদনকারী সংস্থার জমা করা কাগজপত্র দেখতে পান। আবেদনকারী দু’টি ঠিকাদার সংস্থা টেন্ডারে উল্লেখিত নির্দিষ্ট কাগজপত্র বা নথি জমা করতে পারেনি বলে গত ১৮ নভেম্বর ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ এবং ঝাড়গ্রামের জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন এসবি এন্টারপ্রাইজ নামে এক ঠিকাদারর সংস্থার মালিক সুভাষ দাস।

    তিনি এ দিন বলেন,‘এসএমএস সিকিউরিটি সার্ভিস নামে একটি এজেন্সি প্রয়োজনীয় জিএসটি রিটার্ন জমা করেনি, যা টেন্ডারের প্রথমেই শর্ত হিসেবে বলা হয়েছিল। এছাড়াও কিছু ওই সংস্থার অন্য কিছু নথিতেও গরমিল রয়েছে। বিষয়টি লিখিত অভিযোগ জানানোর পরেও ওই সংস্থাকে কাজের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে।’

    সুভাষ আরও বলেন,‘গত ২২ নভেম্বর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দু’টি টেন্ডারের জন্য যে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছেন তাতেও কতদিন পর্যন্ত কাজ করা হবে তাও উল্লেখ করা হয়নি। এই দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি হাসপাতালের অ্যাকাউন্টস অফিসার যুক্ত। উনি হাসপাতালের অধ্যক্ষকে ভুল বুঝিয়ে এ সব কাজ করাচ্ছেন। এই দুর্নীতির বিচার চেয়ে আমি কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কোর্ট খুললেই আমি আইনজীবীর মাধ্যমে দ্রুত আদালতে আবেদন করব।’

    এই দুর্নীতি নিয়ে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ সুস্মিতা ভট্টাচার্য বলেন, ‘কোন বেআইনি করা হয়নি। আমার কি খেয়েদেয়ে কাজ নেই বেআইনি কাজ করব?’ অন্য দিকে, অভিযুক্ত ঠিকাদারি সংস্থার মালিক মৌমিতা মাহাতোকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা আমাকে বলছেন কেন? আমরা কাগজপত্র দিতে পেরেছি কি, পারিনি সরকার জানে। যিনি অভিযোগ করছেন তাঁকে জিজ্ঞেস করুন কোন কাগজ দিইনি। আর এটা নিয়ে একটা সংশোধনী বেরিয়েছিল, সেটা একবার দেখে নেবেন।’

    আর যে অ্যাকাউন্টস অফিসারের নাম এখানে অভিযুক্ত সংস্থার ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে উঠে আসছে সেই দেবব্রত পাত্রের বক্তব্য, ‘আমি এ ক্ষেত্রে অথরিটি নই। আমি ওখান থেকে বদলি হয়ে চলে এসেছি। এ বিষয়ে কিছু জানার থাকলে প্রিন্সিপালের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’

  • Link to this news (এই সময়)