এই সময়: ক্রিস্টোফার রোডের হেলে পড়া বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ট্যাংরা থানার অফিসার হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা করছেন, ‘আপানারা বাড়ি ফাঁকা করে দিন। এই বাড়িকে বিপজ্জনক বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এই বাড়ি ভেঙে ফেলা হবে।’
সেই ঘোষণা শুনে একটা লাঠিতে ভর দিয়ে তিনতলার ফ্ল্যাট থেকে খোঁড়াতে খোঁড়াতে নেমে আসেন বছর পঞ্চাশের অবলা নন্দী। পুলিশ অফিসারদের কাছে গিয়ে তাঁর সরাসরি প্রশ্ন, ‘এই ভাঙা পা নিয়ে কোথায় যাব? কোথায়? জায়গাটা বলুন।’ দৃশ্যতই বিড়ম্বনায় পড়া পুলিশ অফিসার হাতজোড় করে তাঁকে বলেন, ‘ম্যাডাম, ভাঙার অর্ডার আমরা দিইনি। কলকাতা পুরসভা দিয়েছে। সেখানকার ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে কথা বলতে হবে আপনাকে। তাঁরাই আপনাকে বলে দেবেন যে, আপনি কোথায় যাবেন।’
সে কথা শুনে মহিলার প্রশ্ন পুলিশকে—‘কোথায় তাঁরা? তাঁদের ডাকুন।’ তার পর এক পুলিশ অফিসারকে গলার স্বর কিছুটা চড়িয়ে বলতে শোনা যায়, ‘কেএমসি-র কেউ কি এখানে আছেন? থাকলে এ দিকে আসুন। ওঁর (অবলা নন্দী) সঙ্গে কথা বলুন।’ তবে জমা ভিড় থেকে বেশ খানিকক্ষণ পরেও কোনও উত্তর আসেনি। পুলিশ অফিসারদের মনে হয়, তাঁদের কাছাকাছি ওই জায়গায় কলকাতা পুরসভার কেউ নেই। শেষমেশ ওই মহিলাকে এক পুলিশ অফিসারের বিনীত পরামর্শ, ‘ম্যাডাম, আপানাকে মল্লিকবাজারে পুরসভার অফিসে গিয়ে ওঁদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’
উত্তর শুনে রাগে গজরাতে গজরাতে অবলা বলেন, ‘দু’ঘণ্টা আগে গোটা বাড়ির কারেন্টের লাইন কেটে দিয়েছে। এখন বলছে, বেরিয়ে যান। কিন্তু কোথায় যাব, সেটা বলছে না।’
ওই মহিলা জানান, ক্রিস্টোফার রোডের হেলে পড়া বাড়ি থেকে খানিক দূরেই তিনি আগে ভাড়া থাকতেন। বছর দুয়েক আগে তাঁর পায়ে অপারেশন হয়। যে বাড়িতে তিনি ভাড়া থাকতেন, সেখানে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি এত খাড়া যে, অপারেশনের পর তাঁর পক্ষে ওঠানামা করা ছিল যন্ত্রণার। বছর খানেক আগে অবলা তাঁর স্বামীর সারা জীবনের সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে ক্রিস্টোফার রোডের এই আবাসনে ফ্ল্যাট কিনে থাকতে শুরু করেন।
হেলে পড়া বাড়ি যাঁদের জমিতে, সেই রিনা ও কৃষ্ণা সেনগুপ্ত বলেন, ‘আমাদের নিজেদের বাড়ি ছিল এখানে। ভালোই ছিলাম। তবে পরিবার বেড়ে যাওয়ায় সবার জায়গা হচ্ছিল না। তাই, ভালো ভাবে থাকব বলে প্রোমোটারকে জমি দিয়েছিলাম। এ বার তো ভালো ভাবে থাকা মাথায় উঠল। কোথায় থাকব, সেটাই এখন বুঝতে পারছি না।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হেলে পড়া বাড়ির পাশেই একটি ফ্ল্যাটবাড়ি নির্মীয়মাণ। যা মাইতি পরিবারের জমির উপর বেড়ে উঠছে। হেলে পড়া বাড়ি ও মাইতি পারিবারের পুরোনো বাড়ির মধ্যে প্রায় চার ফুট ব্যবধান ছিল। ওই ফাঁক দিয়েই স্থানীয়রা দুই বাড়ির পিছনে থাকা পাড়ার খেলার জায়গা ‘জীবশি মাঠ’–এ যাতায়াত করতেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাইতি পরিবারের জমিতে ফ্ল্যাটবাড়ি নির্মাণ যখন শুরু হলো, সেই সময়ে প্রোমোটার চার ফুট তো অনেক দূর, দু’বাড়ির মধ্যে এক ফুট জমিও ঠিকঠাক ছাড়েননি।