• উৎকর্ষ শিল্পমেলায় থিম ‘বহুরূপী’
    এই সময় | ২৩ জানুয়ারি ২০২৫
  • রাকিব ইকবাল ■ আমতা

    বছরভর বহুরূপেই সমাজসেবায় ভিন্ন–ভিন্ন ভূমিকায় অবতীর্ণ হন ওঁরা।‌ দুঃস্থ্, মেধাবীকে দেখান এগিয়ে চলার স্বপ্ন, মুমূর্ষু রোগীকে দেখান বাঁচার স্বপ্ন, আবার বন্যায় পীড়িতদের দেখান পাশে থাকার স্বপ্ন।‌ একদল যুবক ফেরি করে বেড়ান স্বপ্ন। ওঁদের সংগঠনের নামও তাই ‘স্বপ্ন দেখার উজান গাঙ’। নিজেরা যেমন বহুরূপীর ভূমিকায় অবতীর্ণ, ফিরিয়েও আনলেন বাংলার বিলুপ্তপ্রায় গ্রামীণ শিল্প বহুরূপীকে। ‘বহুরূপী’কে থিম করেই আয়োজন করলেন এক শিল্পমেলার। এই মেলার তাঁরা নাম রেখেছেন 'উৎকর্ষ’।

    মেলায় আগত প্রতিযোগীরা মঞ্চে নিজেদের যাচাই করলেন নিজেদের সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। কেউ সাজালেন কনে, কেউ বহুরূপী, কেউ দিলেন আলপনা, কেউ সাজালেন মেহেন্দি, আবার কেউ করলেন ফোটোগ্রাফি, হাতের কাজ।‌ সবটাই ছিল প্রতিযোগিতামূলক।

    গ্রামীণ হাওড়ার আমতার উদং গ্রামে দামোদরের পাড়ে অবস্থান কালীমাতা আশ্রমের। সেই আশ্রম চত্বরে বসেছিল উৎকর্ষ গ্রামীণ হাওড়া অঙ্কন ও শিল্পকলা উৎসব। এই শিল্পমেলাকে কেন্দ্র করে কার্যত উৎসবের চেহারা নিল দামোদর পাড়ের এই আশ্রম। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এ বার এই শিল্পমেলা পঞ্চম বর্ষে পা দিয়েছে। এ বার শিল্পমেলার থিম ‘বহুরূপী’। এই ভাবনার আদলেই আশ্রম প্রাঙ্গণকে সাজিয়ে তুলেছিলেন সংগঠনের সদস্যরা। ছবির কোলাজ, টিনের উপর কাজ, রঙবেরঙের পতাকায় আশ্রম চত্বরকে সাজিয়ে তুলেছিলেন অর্ঘ্য, রঘু, সায়নদীপ, সৌভিকরা। তোরণ থেকে মঞ্চ সব জায়গায় ছিল অভিনবত্ব ও শৈল্পিক ভাবনার ছোঁয়া।

    এক দিনের এই শিল্পমেলায় বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন হস্তশিল্পের সম্ভার সাজিয়েছিলেন শিল্পীরা। ছিল পাঁচটি বিভাগের অঙ্কন প্রতিযোগিতা। আল্পনা, ফোটোগ্রাফি, মেহেন্দি, হস্তশিল্প, রূপসজ্জার মতো নানা সৃজনশীল প্রতিযোগিতাতেও প্রায় পাঁচশোরও বেশি প্রতিযোগী অংশ নেন। হাওড়া জেলার পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে বহু প্রতিযোগী বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। শিল্পমেলার মুক্তমঞ্চে ছিল বাগনান সৃজনী স্কুল অব ড্যান্সের নৃত্যানুষ্ঠান ও মাকড়দহ হৃদিকথার শ্রুতি নাটক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বামী ভবস্থিতানন্দ মহারাজ, বিশিষ্ট শিল্পী বিপ্লব ধর, অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অব পোস্টাল সার্ভিসেস সতীশ আচার্য, হাওড়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণ ঘোষ প্রমুখ।

    রূপসজ্জা প্রতিযোগিতার র‍্যাম্প শো দেখতে উপচে পড়েছিল ভিড়। সংগঠনের সহ-সম্পাদক পৃথ্বীশরাজ কুন্তী জানান, এ বার অন্যতম আকর্ষণ ছিল লাইভ বহুরূপী ও জীবন্ত স্ট্যাচু। বহুরূপী হিসেবে শিব, কালী, শিম্পাঞ্জি, টিয়াপাখি, গণেশ সেজে উৎসবকে ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছে দেন প্রতিযোগীরা। পৃথ্বীশরাজ কুন্তি বলেন, ‘বাংলার লোকসংস্কৃতির সঙ্গে বহুরূপীদের ওতপ্রোত যোগ। একটা সময় প্রায়ই গ্রামবাংলায় বিভিন্ন মেলায় সং বা বহুরূপীদের দেখা মিলত। কিন্তু সময়ের স্রোতে তাঁরা আজ হারিয়ে যেতে বসেছেন। বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতিকে নব প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই আমাদের এই উদ্যোগ।’

  • Link to this news (এই সময়)