বিশ্বদেব ভট্টাচার্য, আসানসোল
এ বার ইসিএল–এর ভূগর্ভস্থ কয়লাখনিগুলির সার্বিক নিরাপত্তায় আনা হচ্ছে উন্নতমানের সিসিটিভি ক্যামেরা। খনির প্রতিটি পিটে বসানো ওই ক্যামেরা কাজ করবে অন্ধকারেও। সংস্থার দাবি, একটি ক্যামেরা খনিগর্ভের অন্তত ৫০ মিটার পর্যন্ত এলাকায় নজরদারি চালাতে পারবে। খনিকর্মীদের হেলমেট, জুতো, গ্লাভস রয়েছে কি না ওই ক্যামেরায় তা ধরা পড়বে। অর্থাৎ শ্রমিকরা সুরক্ষিত অবস্থায় কাজ করছেন কি না তা ধরা পড়বে এই ক্যামেরায়। খনিগর্ভ থেকে ছোট ট্রলিতে কয়লা আনা হয়। সেই পদ্ধতিও যথাযথ ভাবে কাজ করছে কি না দেখা হবে সেটাও।
ইসিএলের জেনারেল ম্যানেজার (সেফটি) অশোক কুমার জানান, এখানে ৪৮টি ভূগর্ভস্থ কয়লাখনি রয়েছে। ওই সব খনিতে কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপত্তা, খনিতে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তার যাবতীয় ছবি ধরা পড়বে ওই ক্যামেরায়। সিসি ক্যামেরাগুলি মনিটরিং করার জন্য খনির উপরে নির্দিষ্ট আধিকারিকের ঘরে ব্যবস্থা থাকবে।
তিনি বলেন, ‘এতে কর্মীরা সুরক্ষিত থাকবেন এবং উৎপাদনও ভালো হবে। এ জন্য টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু হবে।’ কয়লা মন্ত্রকের অন্যতম উপদেষ্টা ও কোল ইন্ডিয়ার প্রাক্তন ডিরেক্টর বি ভিরা রেড্ডি ‘এই সময়’কে জানান, ইসিএলের সমস্ত ভূগর্ভস্থ কয়লা খনির প্রত্যেকটি পিটে অত্যন্ত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘খনির ভিতরে আলো সামান্যই। কিছুটা অন্ধকার থাকলেও এই ক্যামেরাগুলি এতটাই উন্নতমানের যে, ছবিতে কোনও অসুবিধা হবে না। দেশের মধ্যে এই ধরনের ক্যামেরা প্রথম লাগানো হচ্ছে। তার পর অন্য জায়গায় বসানো হবে।’
১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন বিহার বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের কাছে চাসনালা কয়লাখনিতে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছিল ৩৭০ জনেরও বেশি শ্রমিকের। এর ১৪ বছর পরে ১৯৮৯ সালের নভেম্বরে পশ্চিমবঙ্গের রানিগঞ্জে মহাবীর কোলিয়ারিতেও ঘটে গিয়েছিল ভয়াবহ বিপর্যয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরেও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল ঝাড়খণ্ডের রাজমহল কয়লাখনি। মারা গিয়েছিলেন সাত জন শ্রমিক। এ ছাড়া প্রায়ই খনি এলাকায় ছোটখাটো নানা দুর্ঘটনা ঘটে। সেই প্রেক্ষিতে কর্মী নিরাপত্তায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্তে সন্তোষপ্রকাশ করেছে শ্রমিক মহলও। জেনারেল ম্যানেজার (সেফটি) বলেন, ‘খনির ভিতরে তেমন কিছু ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে তা উপরে কর্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। তাতে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে বলেই বিশ্বাস।’
সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে খনিগর্ভের ক্যামেরার সঙ্গে ভূতলের ক্যামেরার সংযোগ ঘটিয়ে ইন্টিগ্রেটেড কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোলিং সেন্টার তৈরি করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ছবি সমেত সমস্ত তথ্য জানা যাবে ইসিএলের সদর দপ্তরে বসেই। ইসিএল জানিয়েছে, দ্বিতীয় পর্যায়ে খোলামুখ খনিতেও উন্নতমানের ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে। তবে শ্রমিক নিরাপত্তার সঙ্গে অত্যাধুনিক দামি যন্ত্রপাতির দিকেও নজরদারি চালাবে এই ক্যামেরা।
কয়লা দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, ইসিএলে ভূগর্ভস্থ খনিগুলিতে উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে আধুনিক পদ্ধতিতে কয়লা তোলার পরিমাণ বাড়ানো হবে। এই সব খনির ভিতরে থাকবে দামি যন্ত্রপাতি। কর্মীদের সার্বিক নিরাপত্তার সঙ্গে সেগুলির দিকেও খেয়াল রাখা হবে। এর ফলে খনিগুলিকে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে খনির উপরে থাকবেন আধিকারিক ও কর্মীরা। দ্বিতীয় পর্যায়ে সিআইএসএফ এবং ইসিএল–এর নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী নজরদারি চালাবে। তৃতীয় পর্যায়ে থাকবে অত্যাধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা। ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে খনির উপরে ও বিভিন্ন কোলিয়ারি সাইডিংয়ে মোট ১৬৪৩টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে।