কার্শিয়াঙে এই বাড়িতেই গৃহবন্দি ছিলেন সুভাষ, রয়েছে নেতাজির লাগানো সেই গাছও
আজ তক | ২৩ জানুয়ারি ২০২৫
কার্শিয়াং থেকে ৩ কিমি দূরে গিদ্দা পাহাড়ে অবস্থিত নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর বাড়ি। বর্তমানে এই বাড়িটিকে মিউজিয়াম রূপে গড়ে তোলা হয়েছে। কার্শিয়াঙে নেতাজি স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটিতে ঐতিহাসিক চিঠি ছাড়াও রয়েছে নেতাজির অনেক ছবি। নেতাজি এখানে এসে মর্নিংওয়াক করতে বেরোতেন। পাগলাঝোরার পাহাড়ি ঝর্নার ধারে নেতাজির মর্নিংওয়াকের ছবিও আছে এখানে। বসু পরিবারের সঙ্গে নেতাজির তোলা অনেক ছবিও আছে তাদের আর্কাইভে। তার বাইরে নেতাজির ব্যবহার করা রুনা খাট, ড্রেসিং টেবিল, লেখাপড়ার টেবিল, চেয়ার সবই আছে।
সেখানে নেতাজির দাদা শরৎচন্দ্র বসু ১৯৩৪ সালে ক্যামেলিয়া গাছ লাগিয়েছিলেন। আজও তা রয়ে গিয়েছে। নেতাজি ইন্সটিটিউট ফর এশিয়ান স্টাডিজের তত্ত্বাবধানে সেই ঐতিহাসিক বাড়ি এখন নেতাজি মিউজিয়াম। তার দায়িত্বে রয়েছেন গণেশ প্রধান। আর সেখানে কেয়ারটেকার হিসাবে রয়েছেন পদমবাহাদুর হেরি। তাঁদের কাছ থেকেই জানা গিয়েছে, নেতাজির নানা স্বাধীনতা সংগ্রামী শরৎচন্দ্র বসু এই বাড়িটি ১৯২২ সালে কিনে নেন সেই সময়ের অসম পুলিশের ডেপুটি সুপার পিটার লেসলির কাছ থেকে। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাড়িটি বসু পরিবারের অধীনে ছিল। ১৯৯৭ সালে রাজ্য সরকার বাড়িটি সংস্কার করে। নতুন মিউজিয়াম আকারে বাড়িটি ২০০০ সালে উদ্বোধন হয়। ১৯৩৬ সালের জুন থেকে ডিসেম্বরে পর্যন্ত ৬ মাস নেতাজি এই বাড়িতে ব্রিটিশের হাতে গৃহবন্দি ছিলেন। হরিপুরা কংগ্রেসের ভাষণ এই বাড়িতে বসেই লিখেছিলেন নেতাজি। এখান থেকে গান্ধীজি ও জহরলাল নেহেরুকেও তিনি চিঠি লিখেছিলেন।
বসু পরিবারের সদস্যরা প্রতি বছর গরমের ছুটি বা পুজোর ছুটিতে এই বাড়িতে এসে সময় কাটাতেন। আর সেই বসু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নেতাজিও এসেছেন বেশ কয়েকবার। ১৯২২ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত তার কথা আছে সেখানে। ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৫ পর্যন্ত শরৎ বসুও এখানে অন্তরীণ ছিলেন বলে খবর। নেতাজি এখানে গৃহবন্দি থাকার সমর চৌকিদারের মাধ্যমে গোপনে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাছে অনেক নির্দেশ পাঠিয়েছেন। আবার এই বাড়িতে বসেই নেতাজি ভাইপো ভাইঝিদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলেছেন। তাদের দোলনায় চড়িয়েছেন। বসু পরিবারের সদস্য শিশির বসু, কৃষ্ণা বসুদের কাছ থেকে ১৯৭৩ সালে প্রতিদিন ২ টাকা হাজিরায় এই বাড়ি দেখভালের কাজ পান পন্যবাহাদুর ছেত্রি। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু প্রায় ৬ মাস নজরবন্দি ছিলেন।
এখান থেকে নেতাজি জার্মানির এমিলিকে ২২টি চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠিতে তিনি এই স্থান এবং এখানকার সৌন্দর্যের কথা লিখেছিলেন।
১৯৯৬ সালে রাজ্য সরকার এটি সংস্কারের দায়িত্ব নেয়। প্রতি বছর এই মিউজিয়ামে নেতাজির জন্মদিন উদযাপন করা হয়। আজও এসডিও কার্শিয়াং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। স্থানীয় মানুষজন উপস্থিত হন এবং নেতাজির মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়।