• মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে ছাড়া পেলেন রেখা, সন্তানহারা মা বললেন, ‘…খালি হয়ে গেল’
    এই সময় | ২৩ জানুয়ারি ২০২৫
  • সন্তানসম্ভবা হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। ভূমিষ্ঠ হয়েছিল তাঁর সন্তানও। খুশির হাওয়া বয়ে যাওয়ার কথা গোটা পরিবারে। ৮ জানুয়ারির রাত বদলে দিয়েছে গোটা চিত্রটা। বাঁচানো যায়নি ফুটফুটে বাচ্চাটিকে। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন রেখা। ১৫ দিন পর মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে থেকে এক রাশ হতাশা সাঙ্গ করেই বাড়ির পথ ধরলেন রেখা ও তাঁর স্বামী সন্তোষ সাউ। চোখে জল নিয়ে বিড়বিড় করে বললেন, ‘কোল যে খালি হয়ে গেল।’ 

    ৮ জানুয়ারি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে সিজ়ারের পর পাঁচ প্রসূতি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। প্রাণ যায় মামনি রুইদাস নামে এক প্রসূতির। তাঁদের কি ‘বিষাক্ত’ স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল? না কি চিকিৎসকদের গাফিলতি? সেই রসহ্যের সমাধান হয়নি আজও। যমে-মানুষে টানাটানির পর বৃহস্পতিবার বাড়ি ফিরলেন সেই পাঁচ প্রসূতিরই একজন রেখা সাউ। 

    হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে রেখা বলেন, ‘একটা স্যালাইন দেওয়ার পর আমার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তার পরেই আমার স্বামীকে বাইরে থেকে স্যালাইন কিনে আনতে বলা হয়। সেই স্যালাইন দেওয়ার পর কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর ভোরবেলা আমার সিজ়ার করা হয়। এর পরে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। আর কিছু আমার মনে নেই। পরে শুনেছি, আমার সন্তানকে নাকি ভেন্টিলেশনে রাখতে হয়। সেখানেই ও....!’ কাঁদতে কাঁদতে ‘মাতৃমা’ বিভাগের পাশে প্রাচীরে হেলান দিয়ে বসে পড়েন রেখা। 

    সন্তানকে হারিয়ে ক্ষোভ জমেছে রেখার স্বামী সন্তোষের মনেও। তিনি বলেন, ‘আমি যে আমার সন্তানকে হারিয়ে খালি হাতে ফিরছি, সেটার দায় কে নেবে? ভবিষ্যতে আমার স্ত্রী যে আবারও গর্ভধারণ করতে পারবে, তার কি কোনও নিশ্চয়তা আছে? ভালো জায়গায় চিকিৎসা করানোর খরচ কে দেবে?’ হাজারো প্রশ্নের উত্তর না পেয়েই ফিরতে হচ্ছে হাসপাতাল থেকে।

    জন্মের কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেন্টিলেশনে পাঠাতে হয় রেখার সন্তানকে। মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল মৌসুমী নন্দী জানান, ওই শিশুর ব্রেনে অক্সিজেন পৌঁছচ্ছিল না (চিকিৎসার পরিভাষায় Birth Asphyxia)। চিকিৎসাতেও সাড়া দেয়নি। ১৬ জানুয়ারি প্রাণ হারায় শিশুটি। 

    দম্পতিকে সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখব। স্বাস্থ্য দপ্তরের আইনের মধ্যে থেকে যতটুকু করা সম্ভব, আমরা নিশ্চয়ই করব। আপাতত আমাদের স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মীদের খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র বা সরকারি হাসপাতাল থেকে ভালো পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)