• জমি কেনায় প্রধানের ‘সঙ্গী’ বাম-কংগ্রেস!
    বর্তমান | ২৪ জানুয়ারি ২০২৫
  • দীপন ঘোষাল, রানাঘাট: বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না পায়রাডাঙা পঞ্চায়েতের। পাঁচ গুণ দামে পঞ্চায়েত সঞ্চালকের জমি কেনার পর এবার জমি কেনার রেজ্যুলিউশন বইয়েও বিরাট গরমিল প্রকাশ্যে এসেছে। কাগজেকলমে যে জমির মালিকই সঞ্চালক নন, সেই জমি নাকি বৈঠকের দিন কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। আর ঠিক একমাস বাদে অন্য এক ব্যক্তির থেকে বিতর্কিত সেই জমি কিনে পরে ৩৭ লক্ষ টাকায় পঞ্চায়েতকে বিক্রি করেন কংগ্রেসের বিজয়েন্দু বিশ্বাস। অভিযোগের স্বপক্ষে বেশকিছু সরকারি নথি সামনে এসেছে। ফলে জমি বিতর্ক যে আরও মারাত্মক আকার নিল, তা বলাই বাহুল্য। 


    অভিযোগকারী তৃণমূল সদস্যরা পঞ্চায়েতের যে রেজ্যুলিউশন বুক প্রকাশ্যে এনেছেন, তাতে একপ্রকার স্পষ্ট, পায়রাডাঙা পঞ্চায়েতের শিল্প সঞ্চালক বিজয়েন্দু বিশ্বাসের জমি কেনার পরিকল্পনা পূর্ব পরিকল্পিত। রেজ্যুলিউশন দেখা যাচ্ছে, ৪ অক্টোবর ২০২৪ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ওই কংগ্রেস নেতার ৭৮ এবং ৮১ দাগ মিলিয়ে মোট ৭০.৫ শতক জমিটি কেনা হবে ৩৭ লক্ষ টাকায়। যদিও সেই বৈঠকে তৃণমূলের প্রধান ছাড়া যাঁরা ছিলেন, তাঁদের দু’জন কংগ্রেস এবং দু’জন সিপিএমের সদস্য। বিতর্কিত জমিটির কাগজপত্র যাচাইয়ের পর দেখা যায়, পঞ্চায়েতে সিদ্ধান্তের প্রায় একমাস বাদে এক ব্যক্তির থেকে বিজয়েন্দু ৭০.৫ শতকের মধ্যে ৭৮ দাগভুক্ত ২৬ শতক জমিটি কেনেন। ২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর মাত্র তিন লক্ষ টাকায় জমিটি কেনা হয়। নথি অনুযায়ী জমি বিজয়েন্দুর হাতে আসার পর ৪ অক্টোবর তারিখের রেজ্যুলিউশনে ২৮ নভেম্বর তারিখ বাসিয়ে সই করেন পায়রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ফাল্গুনী বিশ্বাস। একই পাতায় দু’ধরনের তারিখ কেন? জলঘোলার সূত্রপাত এখান থেকেই। 


    জমিজটের দ্বিতীয়স্তর পঞ্চায়েত কর্তৃক কংগ্রেসের ওই নেতাকে জমির দাম মেটানো। আনুমানিক বাজার মূল্যের চেয়েও পাঁচ গুণ বেশি দামে জমি বিক্রির পর ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ জমিটির রেজিস্ট্রি হয়। যদিও পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৭ লক্ষ টাকা বিজয়েন্দুকে দিয়ে দেওয়া হয় ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর। 


    ইতিমধ্যেই ক্ষুব্ধ তৃণমূল সদস্যদের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে জেলাস্তর এবং ব্লকস্তরে তদন্ত শুরু হয়েছে। পঞ্চায়েতের কার্যনির্বাহী সহায়ককে শোকজ করেছেন রানাঘাট-১এর বিডিও। পঞ্চায়েতের তরফে বিকৃত তথ্য পেশ, ভুয়ো দাবি করার মতো একাধিক বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছে শোকজে। যদিও কাগজেকলমে একের পর এক গরমিল প্রকাশ্যে এলেও নিজের অবস্থানে অনড় প্রধান। তিনি বলেন, জমি কেনার কমিটির সদস্যরাই বৈঠকে ছিলেন। কোনও নথিতে গরমিল নেই। ওই জমির দাম ৩৭ লক্ষ টাকাই। ২৬ শতক জমির মালিক আগে থেকেই বিজয়েন্দুবাবু ছিলেন। যদিও একই বিষয়ে মঙ্গলবার প্রধান দাবি করেছিলেন, পঞ্চায়েতের ৩০জন সদস্যকেই জানিয়ে জমি কেনা হয়েছে। তাছাড়া কেন রেজিস্ট্রির এক মাস আগেই ওই কংগ্রেস নেতার অ্যাকাউন্টে পঞ্চায়েত টাকা পাঠাল, তার কোনও সদুত্তর মেলেনি প্রধানের বক্তব্যে। 


    রানাঘাট-১ বিডিও জয়দেব মণ্ডল বলেন, বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তদন্ত শুরু হয়েছে। সামগ্রিক বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
  • Link to this news (বর্তমান)